জন্মের এক বছরের মাথায় পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হন সাধারণ ঘরে জন্ম নেওয়া মনসুর। বড় হওয়ার পর থেকে গানই তার রোজগারের একমাত্র সম্বল।
তবে গান গেয়ে কারো কাছে টাকা-পয়সা চান না মনসুর। গান শুনে যার ভালো লাগে, ইচ্ছে হলে তাকে টাকা দেন। আর সে টাকায়ই বেঁচে আছেন তিনি।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় মনসুর রহমানের। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় তার গ্রামের বাড়ি।
মনসুর বলেন, ‘গানই আমার রোজগারের একমাত্র সম্বল। কিন্তু পরিবারের কেউ কখনো শিল্পী ছিলেন না বা গান করতেন না। যখন নিজে বুঝতে শিখেছি, তারপর থেকে গান গাওয়ার চেষ্টা করতাম। এক সময় চেষ্টা করতে করতে শিখে গেলাম দোতারা বাজানোও। এরপর থেকে গানই আমার ধ্যান-জ্ঞান’।
কিভাবে পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জন্মের পনের দিনের মাথায় আঁতুর ঘরেই আমায় রেখে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মমতাময়ী মা। তারপর বাবা আবার নতুন করে বিয়ে করেন। গড়ে ওঠে বাবার নতুন সংসার। কিন্তু এক বছরের মাথায় চোখ ওঠা রোগে আমার দু’চোখের আলো চলে যায়। তারপর থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতায় কেটে গেছে জীবনের ৬৬টি বছর’।
তবে একাকি জীবন কাটাননি মনসুর, বিয়ে করেছেন তিনি। রয়েছে স্ত্রীসহ এক ছেলে, দুই মেয়ে। তারা সবাই রাজশাহীতে থাকেন। কিন্তু তাদের অবস্থা ভালো না।
‘আর তারা কেউ আমায় দেখেও না। তাই বেঁচে থাকতে গানই আমার সম্বল। গান গেয়ে যা আয় হয়, তাই দিয়েই কোনোভাবে কেটে যাচ্ছে জীবন’- বলেন মনসুর।
তবে যখন দোতারা বাজিয়ে গান গেয়ে অনেক অর্থ আয় করতেন, তখন ছেলে-মেয়ে সবাই তার আপন ছিলো। কিন্তু আয় কমে যাওয়ায় আজ সবাই তাকে পর করে দিয়েছে।
জীবন সায়াহ্নে এসে এখন আপন বলতে কেউ নেই মনসুরের পাশে। আছে শুধু দোতারাটি। যে দোতারাই তার আগামীর বেঁচে থাকার প্রেরণা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
এসজে/বিএস/এএসআর