ক্রমে অর্থনীতি, শিক্ষা, পর্যটনে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এ জেলার সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলো কোনোমতে পাথর ও পিচ দিয়ে সমান করে দেওয়া হচ্ছে। যা চলাচলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
সরজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের প্রায় পুরোটা জুড়ে পিচ ও পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাকিয়ে পড়েছে লাল ইটের খোয়া। বর্ষা মৌসুমে যা হয়ে ওঠে আরও অসহনীয়।
সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বাঁকাল ব্রিজ পর্যন্ত, আলিপুর থেকে নলতা পর্যন্ত, কালিগঞ্জ বাস টার্মিনাল এলাকা, শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে মুন্সীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল, এমনকি হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে উঠেছে। কোনো গুরুতর অসুস্থ রোগীকে এ সড়ক ধরে কোথাও নিতে হলে তার পরিণাম আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সুস্থ মানুষও হয়ে পড়েন অসুস্থ।
সংস্কারের নামে প্রতিবছরই কিছু কিছু জায়গায় যেনতেনভাবে পাথর ও পিচ দিয়ে সমান করে দেওয়া হয়। যা এক-দু’মাসের মধ্যেই উঠে গিয়ে ফিরে আসে আগের অবস্থানে। ফের শুরু হয় জনদুর্ভোগ।
বিগত কয়েক বছরের মতো ঠিক একইভাবে চলতি মাসে আবারও সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এ কাজে মোটেও আস্থা রাখতে পারছে না সাধারণ মানুষ।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন অংশে সংস্কারের জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
কিন্তু সড়কটি স্থায়ীভাবে পুনর্নির্মাণ না করে প্রতিবছরই দায়সারাভাবে সংস্কার করায় সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ ব্যাপারে শ্যামনগরের বাসিন্দা আল ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের যে অবস্থা তাতে চলার উপায় নেই। সড়কটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা দরকার। কিন্তু প্রতিবছর সংস্কারের নামে বরাদ্দ লুটপাট হয়। তাতে যে কাজ হয়, তা থাকে এক দু’মাস। পরে যা তাই অবস্থা।
নলতার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ ৩৪ কিলোমিটার পথ। কিন্তু সড়কের যে অবস্থা তাতে বাসে কালিগঞ্জ পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। আর মুন্সীগঞ্জ পৌঁছাতে লাগে চার ঘণ্টা। অথচ কালিগঞ্জ ৪৫ মিনিট আর মুন্সীগঞ্জ দেড় ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব। সড়কের বেহাল দশার কারণেই সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ গেটলক সার্ভিস উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সর্বস্তরের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে আরও।
দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কটি পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির সভাপতি আনিছুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক পুনর্নির্মাণ না করে সংস্কার করা মানেই লুটপাট। এতে কোনো কাজ হয় না। শুধু শুধু অর্থের অপচয়। সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা এতোই নাজুক যে, শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। লোক দেখানো কাজ করে মাঝে মধ্যে ইট-পাথর ফেলে মেরামত করা হয়। কিন্তু দু’দিন না যেতেই আবার যা তাই হয়ে যায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় সাতক্ষীরার ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্প ধ্বংসের পথে।
এজন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল করিম সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে বলেন, আপাতত দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, তাতে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ২য় পর্যায় শুরু হচ্ছে। এ প্রকল্পে সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কটি অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদন হলে সড়কটি পুনর্নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
এএ