ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে গাড়ি চলে হেলেদুলে

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে গাড়ি চলে হেলেদুলে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে গাড়ি চলে হেলেদুলে। ছবি: মানজারুল ইসলাম- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: বেহাল দশার কারণে সড়কপথের যানবাহন চলে নৌকার মতো হেলে-দুলে। এ দশা একদিন কিংবা দু’দিনের নয়, বছরের পর বছরের। খানাখন্দে ভরা মহাসড়কটিতে চলার উপায়  নেই, না চলেও উপায় নেই। তবুও নজর নেই জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের।

খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কের এমনই বেহাল দশা নিয়ে অভিযোগ করেন সড়কটির প্রতিদিনের যাত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা জোবায়ের মোস্তাফিজ ।

তিনি বলেন, প্রতিদিন সাতক্ষীরা থেকে খুলনা আসতে হয়।

নৌকার মতো নৌকার গতিতেই চলে গাড়ি। দুই ঘণ্টার পথ লাগে চার ঘণ্টা। রাস্তা খারাপ থাকায় গাড়ির গতি বাড়াতে পারেন না চালক।  

‘জানি না এ সড়ক কবে ভালো হবে’- বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন জোবায়ের।  

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কের জিরো পয়েন্টে কথা হয় তার সঙ্গে। সড়কের বেহাল দশা নিয়ে এ সময় কথা হয় আরেক যাত্রী আব্দুল লতিফের সঙ্গেও।  

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে গাড়ি চলে হেলেদুলে।  ছবি: মানজারুল ইসলাম- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমতিনি বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ ডুমুরিয়ার ভেতরে। বিশেষ করে চুকনগর থেকে খর্ণিয়া পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বাস চালক হারুন বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরার সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। এই রাস্তায় আমার প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। প্রায়ই কাত-চিৎ হয়ে গাড়ি পড়ে যায়। বিকল হয়ে পড়ে যন্ত্রপাতি। ঘটে দুর্ঘটনা।

ট্রাক চালক আব্দুল্লাহ বলেন, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে এই মহাসড়ক হয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। ট্রাক ও মালামাল নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জীবনের তাগিদে চলাচল করতে হচ্ছে। আমাদের দুর্ভোগ জনপ্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষ দেখেও যেন চোখ বন্ধ করে রেখেছেন। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে গাড়ি চলে হেলেদুলে।  ছবি: মানজারুল ইসলাম- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবেহাল পয়েন্টগুলো ঘুরে দেখা যায়, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চুকনগর পর্যন্ত ২৮.৩০ কিলোমিটার সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়ে সেখানে প্রতিনিয়ত হালকা ও ভারী যানবাহন পড়ে লক্কড়-ঝক্কড় হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেহাল অবস্থা কৈয়াবাজার থেকে শুরু করে ঝিলের ডাঙ্গা ও খর্ণিয়া হয়ে চুকনগর পর্যন্ত। এখানটার সব জায়গার সড়কের ওপরের পিচ উঠে কার্পেটিং, ঝিল,  পাথর ও ইটের ছড়াছড়ি হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য বড় বড় গর্তের। প্রচণ্ড ধুলার কারণে চোখ মেলে দেখা যায় না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজারও মানুষ ও যানবাহন।

জানা যায়, সাতক্ষীরার স্থলবন্দর ভোমরা থেকে মামামাল নিয়ে যানবাহনগুলো খুলনা, বাগেরহাট, মংলা, ফকিরহাট, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ যায়। অন্যদিকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক দিয়ে মাওয়া হয়ে ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, জামালপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে থাকে হাজারো যানবাহন।

স্থানীয়রা এ দুর্দশা তুলে ধরে বলেন, সাতক্ষীরায় সুন্দরবনের কিছু অংশ রয়েছে। এ অংশ দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসেন। তাদের এ সড়কের কারণে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে অনেক পর্যটক একবার এলেও পরে আর আসতে চান না, সুপারিশ করেন না অন্য কাউকেও। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ।  ছবি: মানজারুল ইসলাম- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএ বিষয়ে সাতক্ষীরার এনডিসি আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন অংশের পর্যটকদের বড় বাঁধা হলো বেহাল সড়ক। বাগেরহাট ও খুলনার চেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সুন্দরবনের বেশি জায়গা দেখা যায় সাতক্ষীরার কয়েকটি পয়েন্ট থেকে। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় অনেকে এ দিকে আসতে চান না।

খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিতে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চুকনগর পর্যন্ত সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সড়কটি সংস্কার করা হবে।  

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে কমার্স লাইফলাইন হিসেবেও বিবেচিত এটি। এ অঞ্চলের চার জেলার সড়কের বেহাল অবস্থা উত্তরণের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার অংশ চুকনগর পর্যন্ত ২৮.৩০ কিলোমিটার রাস্তার সম্ভাব্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১শ’ ৫৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অনুমোদন মিললে সড়কের কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
এমআরএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।