তবে এ বছর ইজতেমার দুই পর্বে দেশের মোট ৩২টি জেলা অংশগ্রহণ করছে। আগামী বছর বাকি ৩২টি জেলার অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।
এবছর ইজতেমার প্রথম পর্বে মোট ১৭টি জেলা থেকে মুসুল্লিরা অংশগ্রহণ করতে আসছেন। শুরুর আগের দিন (বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি) থেকে দলে দলে মুসল্লিরা আসছেন। মুসল্লিরা বাস, ট্রাক ও পিকআপ ভাড়া করে আসছেন ইজতেমার ময়দানে।
তিন দিনের এই জমায়েতে মুসল্লিরা তাদের রান্নার বিভিন্ন মাল সামান নিয়ে এসেছেন। এদিকে অনেকেই ইজতেমার সপ্তাহখানেক আগেই ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন।
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে ধনী ও গরীবের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই মুসলমান ভাই ভাই। ’
প্রতিবছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশি মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। এবারও বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করতে আসছেন বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমার ময়দান সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মুসল্লিরা নিজেদের কাজগুলো খুব যত্ন সহকারে করছেন। তুরাগতীরে চলেছে রান্নার কাজ, নামাজের আগে চলছে মুসল্লিদের গোসল, আবার অনেকেই ময়দানে প্রবেশ করে খুঁজে চলেছে নিজ জেলার খিত্তা।
নদীর তীরে চলছে রান্না:
ময়দানে আগত মুসল্লিদের খাবার রান্নার জন্য তুরাগতীরেই চলছে আয়োজন। জোরেসোরেই সবাই এই রান্নার কাজে সহযোগিতা করছেন। এর আগের বছরগুলোতে মুসল্লিরা রান্নার কাজে লাকরি ব্যবহার করতেন। তবে এবার অনেককেই এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
সাতক্ষীরা থেকে আগত মুসল্লি মো. ইব্রাহিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগের বছর আমরা ২০ জন একসঙ্গে এসেছিলাম। তখন রান্নার কাজে লাকড়ি ব্যবহার করেছিলাম। এবার আমরা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বোতল-গ্যাস নিয়ে যাবো। এতে রান্নায় সময়ও কম লাগে, ঝামেলাও কম।
তাছাড়া, পাতিলের তলানিতে কালিও হয় না।
চলছে গোসল কাজ:
জোহর নামাজের আগে অনেকটা ভিড় দেখা গেছে ময়দানের গোসলের স্থানগুলোতো। হাতে মগ, বালতি নিয়ে সেখানে গোসল করছেন তারা।
এক সঙ্গে দুপুরের খাবার:
মুসল্লিরা সবাই একসঙ্গে বসে গ্রহণ করছেন আহার। নিজেদের খিত্তায় গোল হয়ে বসে খুব সুশৃঙ্খলভাবে খাবার খাচ্ছেন। তাদের আশেপাশে থাকা অন্য মুসল্লিদেরও খাবার গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন মুসল্লিরা।
বিদেশি মেহমান:
এ বছর বিশ্ব ইজতেমায় বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) পর্যন্ত ইউরোপ, আমেরিকা-অঞ্চল, সৌদিআরব সহ বিশ্বের ৭৯টি দেশ থেকে ৪ হাজার ৮০০ জন বিদেশি মুসল্লি এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন। এবার সৌদি আরব থেকে ২ হাজার মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করছেন।
এর আগে, ২০১৬ সালে বিশ্বের ৮৮টি দেশের ১৮ হাজারের বেশি বিদেশি মুসল্লি তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন।
মৃত্যু:
এবছর বিশ্ব ইজতেমা শুরুর আগে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ময়দানে উপস্থিত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে কক্সবাজার থেকে আসা মুসল্লি হোসেন আলী (৭০), ময়মনসিংহ থেকে আগত ফজলুল করিম (৬৫), ও সাতক্ষীরা থেকে আব্দুস সালাম (৬০)বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। ময়দানে তাদের জানাজা সম্পন্ন করে লাশ নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য ছয় হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। মুসল্লিদের কোনো প্রকার সমস্যা যেন না হয় এ বিষয়ে নজর রাখতে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির পোশাকধারী সদস্যদের্ও মোতায়েন করা হয়েছে। ’
মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘ইজতেমায় কোনো মুসল্লি কোনো প্রকার হয়রানির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনির সদস্যদের জানাতে হবে। জানামাত্র তারা ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে যাবে ’
২০১৭ সালে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ও দ্বিতীয় দুই পর্বেই অংশ নেবেন কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও বরগুনা জেলার মুসল্লিরা।
এবছর ইজতেমার প্রথমপর্ব হবে ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয়পর্ব হবে ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ১৯৯৬ সালে একই বছর দুইবার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং মুসল্লিদের চাপ ও দুর্ভোগ কমাতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
এসজেএ/জেএম