দেখছেন আলুর পচনের মাত্রা। ওষুধ প্রয়োগেও সফলতা আসেনি।
অব্যাহত রয়েছে শৈতপ্রবাহ। দাপট কমছে না ঘন কুশায়ার। কয়েকদিন আগে হয়ে গেছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। আবহাওয়া ক্রমেই চলে যাচ্ছে আলু চাষীদের প্রতিকূলে। জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই। কাকডাকা ভোরে জমিতে ছুটছেন চাষী। পিঠে বাঁধা থাকছে ওষুধ ভর্তি ড্রাম। স্প্রে করে চলেছেন আলু গাছে।
তারপরও বাঁচানো যাচ্ছে না আক্রান্ত গাছগুলো। প্রতিকূল আবহাওয়া অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই। রোগ দমনে ব্যর্থ হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষীরা। সবমিলিয়ে রোগে আলুর পচনে শোকে কাতর চাষী।
উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার খ্যাত বগুড়ার বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য ওঠে আসে।
আজগর আলী, আবু সাঈদ, আব্দুল ওহাবসহ একাধিক আলু চাষী বাংলানিউজকে জানান, গত এক সপ্তাহ আগেও তাদের জমির গাছগুলো খুবই ভালো ছিল। তর তর করে বেড়ে উঠছিল ক্ষেতের গাছগুলো। চারদিকে সবুজে ছেয়েছিল। সঙ্গে মাটির নিচে সমহারে আলু বড় হচ্ছিল। ভাল ফলন ও দামের আশায় বিভোর ছিলেন তারা। কিন্তু এক সপ্তাহ পরের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।
এসব আলু চাষীরা জানান, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ার শৈতপ্রবাহ বাড়তে থাকে। সঙ্গে যুক্ত হয় ঘন কুয়াশা। প্রতিকূল আবহাওয়ার দাপটে আলুর গাছ শীতকালীন ছত্রাকনাশক রোগ লেটব্রাইটে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষেতের গাছগুলো কুকড়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। হলুদ হয়ে ক্ষেতের গাছ পচে নষ্ট হচ্ছে।
নুরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল হামিদ বাংলানিউজকে জানান, দফায় দফায় জমিতে ওষুধ স্প্রে করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। কোনো ভাবেই রোগের প্রাদুর্ভাব কমছে না। চোখের সামনেই ক্ষেতের গাছগুলো পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ চেষ্টা করেও জমির ফসল রক্ষা করতে পারছেন না তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানায়, চলতি রবি মৌসুমে এ জেলায় কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্যানোলা, লাল পাকড়ী, হাগড়াইসহ বেশ কয়েকটি জাতের আলু ৬৭হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে লাগানো হয়েছে। যা গত বছর লাগানো হয়েছিল ৬২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪লাখ মেট্রিকটন। যা গেল বছর সাড়ে ১২লাখ মেট্রিকটন ছিল।
২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে চলতি মৌসুমের আলু লাগানো শুরু হয়। চলে নভেম্বর মাসের শেষ নাগাদ পর্যন্ত। এরমধ্যে আগামজাতের আলুও চাষ করেন এ জেলার কৃষকরা। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত আগামজাতের প্রায় ৭হাজার হেক্টর জমির আলু উত্তোলন করেছেন চাষীরা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে ১৫মার্চ পর্যন্ত পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আলু চাষ করা হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলায়। পরের স্থানে রয়েছে বগুড়া সদর, শেরপুর, কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা।
কৃষি বিভাগের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় আলু চাষীরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। অনেক চাষীর আলু ক্ষেতে রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য কৃষকদের নানাভাবে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা হবে না বলেও কৃষিবিদ আব্দুর রহিম আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭
এমবিএইচ/বিএস