গারমিট বাজারের গেট দিয়ে প্রবেশ করে হাতে ডান পাশে কাঁচের তাকে সাজানো নানা ধরনের ব্রেড, বেকারির তৈরি কেক, বিস্কুট, ক্রোসন, ইয়োগা। বেকারির কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরও ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা গেল।
এ দৃশ্যটি জঙ্গি হামলায় আক্রান্ত হলি আর্টিজান অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন রূপ। গত বছরের ১ জুলাই বিভিষীকাময় জঙ্গি হামলার ঘটনা থেকে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে হলি আর্টিজান বেকারি। তবে পুরোনো জায়গায় নয়, গুলশান-২ উত্তর এভিনিউয়ে ভাড়া জায়গায় জেমকন গ্রুপের সুপার শপ গারমিট বাজারের একপাশে ছোট্ট পরিসরে নতুন করে আবার চালু হয়েছে হলি আর্টিজান।
জঙ্গি হামলায় প্রায় ৫ মাস বন্ধ থাকার পর ১০ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর গুলশান উত্তর এভিনিউয়ে ১৫৩ নম্বর র্যাংগস অর্কিড বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় ছোট্ট পরিসরে আবার চালু হয়। প্রথম দিন থেকে ক্রেতাদের বেশ আগ্রহ হলি আর্টিজান বেকারিকে ঘিরে।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) হলি বেকারি ঘুরে দেখা যায়, সকাল সকাল গরম রুটি ও বেকারির খাবার খেতে চলে এসেছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ পার্সেল নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ সেলফি তুলছেন। আর এদের মধ্যে বিদেশি ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। আগত ক্রেতাদের মধ্যে কয়েকজন ছোট্ট শিশুকেও দেখা গেল। যারা খাবার নিয়ে এদিক-ওদিকে ছোটাছুটি করছে।
রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়ায় গুলশান লেকের ধারে সুদৃশ্য দালানে পরিচালিত হতো হলি আর্টিজান বেকারি অ্যান্ড রেস্তোরাঁ। বিদেশিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলো বেকারিটি। বিশেষ করে ওভেন থেকে বের করা গরম রুটি আর বেকারির তৈরি খাবার বেশি পছন্দ ক্রেতাদের। খাবার খেতে খেতে সবুজ লেনে চলতো আড্ডা। এমন শান্তি পরিবেশে একদিন দু:স্বপ্ন এসে হানা দেয়। যার ক্ষত চিহ্ন আজও বহন করছে হলি আর্টিজানের সেই বিল্ডিংটি।
গুলশানের র্যাংগস আর্কিড বিল্ডিংয়ের এ নতুন হলি বেকারিতে হয়তো আগের পরিবেশ নেই, এরপরও রুটি ও বেকারির তৈরি খাবারের স্বাদ আগের মতোই রয়েছে। তাই তো, হলি আর্টিজান ‘হলি’ বেকারি নামে চালু পর থেকেই পুরোনো কাস্টমার সকাল সকাল চলে রুটি, কফি ও বেকারির তৈরি খাবার খেতে আসছেন।
পহেলা জুলাই জঙ্গি হামলার দিনে অন্যদের সঙ্গে রাতভর জিম্মি ছিলো হলি আর্টিজান বেকারির বারিস্তার (কফি) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সেলস এক্সিকিউটিভ অফিসার শাহরিয়ার। উদ্ধার হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বেকার দিনযাপন করছিলেন। যদিও মালিক পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা পেয়েছেন এ কয়েক মাসে। আবার নতুন করে হলি আর্টিজান চালু হওয়ায় খুশির সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনাও কাজ করছে।
শাহরিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, আবার এ রেস্তোরাঁ চালু হবে ভাবতে পারি নি। তবে চালু হওয়ার সবার আগ্রহ আরো বেড়ে গেছে। দেশি-বিদেশি পুরোনো ক্রেতারা আমাদের অভিনন্দন ও সমবেদনা জানাতে আসছে। আমাদের দেশি ক্রেতাদের থেকে বিদেশি ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি। এখানে স্থান সংকটের কারণে আমাদের মালিকের আরো যে রেস্তোরাঁ আছে সেখান থেকে খাবার তৈরি করে এনে বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে কোমল পানীয়সহ ৫৩ আইটেমের খাবার বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের মধ্যে ভয়-ভীতির আশঙ্কা দেখছেন কি না-জানতে চাইলে বলেন, কারো মধ্যে কোনো ভয়-ভীতির আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছি না। বিশেষ করে সবাই এসেই মজা করে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট ও চেক-ইন দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সুপার শপ গারমিট বাজার ও হলি আর্টিজান এক সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।
‘জঙ্গি হামলার মতো বির্তকিত অধ্যায়ের পরও হলি আর্টিজানের সঙ্গে চুক্তির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে গারমিট বাজারের সহকারী ম্যানেজার (আউটলেট) এ কে এম রাইস ইউএস জামান মুহিত বাংলানিউজকে বলেন, জঙ্গি হামলায় হলি আর্টিজানের তো কোনো হাত ছিলো না। নেগেটিভ মানসিকতার মানুষেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে। হলি আর্টিজানের বেকারির সুনাম রয়েছে। আশা করি, তাদের সঙ্গে কাজ করলে আমাদের সুপার শপের ব্যবসায় উন্নতি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭
এমসি/এসএইচ