হবেই না কেন? প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় ২০১৬ সালে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার পরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার শিক্ষাজীবন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি স্কুল থেকে বিনামূল্যে বই পেলেও খাতা, কলম, পোশাক, ব্যাগ কিনে দিতে পারছেন না তার দিনমজুর মা খাদিজা বেগম।
সুমার মতো লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে তার ছোটবোন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রুমা খাতুনের। দুই মেয়ের পড়ালেখার টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবেন সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন হতদরিদ্র মা।
খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা চর রূপসার শাজাহান হাজির বস্তিতে মা-বোনসহ থাকে মেধাবী সুমা। ২০১৬ সালে বাগমারা দক্ষিণপাড়া রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে গোল্ডেন এ প্লাস পায় সুমা খাতুন। আর্থিক অনটনের মধ্যেও নিজের অদম্য মনোবল, নিরলস চেষ্টা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতায় তার এ অর্জন। বর্তমানে সে শামসুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
এতো ভালো ফলাফল করলেও কেউ তার ঝুপড়ি ঘরটিতে উঁকি দেননি। শুভেচ্ছা কিংবা অভিনন্দন জানান নি। আশ্বাস দেননি সুমার লেখাপড়ার খরচ জোগানোর।
হতাশাগ্রস্ত সুমার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। এ সময় সে জানায় তার দুঃখের কথা।
সুমা বলে, মা মাছ কোম্পানিতে কাজ করতে গেলে স্কুল থেকে আসার পর অনেক সময় আমাকে ঘরের রান্নাবান্না করতে হয়। ছোট বোনকে পড়াশোনা করাতে হয়েছে। অভাবের তাড়নায় মাঝে মধ্যে না খেয়ে স্কুলে গেছি। ভালো জামা-জুতা না থাকার কারণে অনেকে আমার সঙ্গে মিশতে চায়না। মা অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত এনেছেন। এখন মায়ের আয় রোজগার তেমন নেই। যে কারণে আমাদের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে।
লেখাপড়া শিখে কি হতে চাও জানতে চাইলে সুমা বলে, আমি শিক্ষক হতে চাই।
সুমার মা খাদিজা জানান, সুমার তিন বছর ও রুমার ২ মাস বয়সে তাদের বাবা (শহিদুল মোল্লা) ফেলে রেখে চলে যায়। তারপর থেকে কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সেই থেকে চিংড়ি মাছ কোম্পানিতে দৈনিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, অভাবের সংসারে সবসময় তাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেয়েছেন। তবে চেষ্টা ও শিক্ষকদের সহযোগিতার কারণে ভালো ফল করতে পেরেছে সুমা।
নিজে লেখাপড়া না জানলেও মেয়েদের লেখাপড়া করাতে চান বলে কেঁদে ফেলেন অভাবী এ মা।
বাগমারার স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিবেশী সোয়ায়েব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অভাব-অনটনের মধ্যেও সুমার মা মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে এসেছেন। নিজের নিরলস চেষ্টা, শিক্ষকদের সহযোগিতায় সুমা গোল্ডেন এ প্লাস পায়। কিন্তু বর্তমানে সুমা ও তার বোনের পড়াশোনা বন্ধের পথে। তাদের মায়ের পক্ষে এখন আর স্কুলের জামা, জুতা, খাতা-কলম কিনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একটু সহযোগিতা পেলে মেধাবী এ দু’বোনের পড়াশোনা বন্ধ হতো না।
বাগমারা দক্ষিণপাড়া রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সুমা এতো দরিদ্র ঘরের মেয়ে যে তাকে খালি পেটেও স্কুলে আসতে হয়। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে শিক্ষকরা ওকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া অত্যন্ত মেধাবী এ মেয়েটি লেখাপড়ার সুযোগ পেলে দেশের গৌরব হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
এমআরএম/জেডএস