এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা এভাবে ছড়িয়ে পড়লেও তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ বা নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত। স্থানীয়দের মতে, এ সংখ্যা আরও বেশি।
গত ৯ অক্টোবর মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস দমনের নামে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযান শুরু করে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে বিশ্বজুড়ে। সেই নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা।
এদের বড় একটি অংশ আশ্রয় নিয়েছে উখিয়ার কুতুপালংয়ে অনিবন্ধিত শিবিরের আশ-পাশে। কোনো রকমে প্লাস্টিকের কাগজের ছাউনি দিয়ে ঘরে তুলে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। কিন্তু এক কাপড়ে দেশ ছেড়ে আসা লোকগুলো ঠিকমত খাবার তুলে দিতে পারছে না সন্তানদের মুখে। তাই খাবারের সন্ধানে তারা ছড়িয়ে পড়ছে শহর ও শহরের আশেপাশে।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) কক্সবাজার থেকে টেকনাফের আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে যাওয়ার পথে দু’পাশে লাইন দিয়ে অসংখ্য নারী-পুরুষকে বসে থাকতে দেখা গেলো। কাছে যেতেই হুড়মুড় করে প্রায় শ’খানেক নারী-পুরুষ ঘিরে ধরলেন।
জানালেন, তারা রোহিঙ্গা। কোনো রকমে জীবন নিয়ে পালিয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আর সে জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতেই এখন সাহায্যের আশায় রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছেন।
চলার পথে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন তাদের দিকে। অনেকে আবার দিনভর বসে থেকেও কোনো সাহায্য পাননি। এভাবেই চলছে তাদের জীবন।
কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের আশেপাশে অনেক রোহিঙ্গাকেই নতুন ঘর তুলতে দেখা যায়। নতুন আশ্রিতদের অনেকে এরইমধ্যে পাহাড়ের মাটি কেটে দেওয়াল তুলেও ঘর তৈরি করছেন। আর এতে সহায়তা দিচ্ছে আগে থেকে এদেশে বসবাস করা তাদের স্বজনরা।
কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঠের পাশেই নতুন কয়েকটি ঘর দেখা যায়। টিলার ওপরেও দু’জন নারীকে নতুন আরেকটি ঘরের দেওয়াল তুলতে দেখা যায়।
তাদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দ আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি অনেক আগেই বাংলাদেশে এসেছি। এবারের সংঘাতে আমার ছোট ভাই তার পরিবার নিয়ে পালিয়ে এসেছে। তাদের থাকার জন্যই এখানে ঘর তুলছি।
পাহাড় কাটতে প্রশাসনের কোনো বাধা আছে কিনা জানতে চাইলে স্থানীয়দের কাছে টাকার বিনিময়ে ঘর তোলার অনুমতি পাওয়ার কথা জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গারা এভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ভেঙে পড়তে পারে পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাসহ নানা নিয়ম-কানুন। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে প্রত্যাবসান প্রক্রিয়া শুরু হলে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় রাখা খুব জরুরি। কিন্তু পুলিশে জনবল খুব কম। এই অপ্রতুলতার সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেন, এখানে বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম, অন্যতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজার দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তারপরও রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় রাখার কোনো উদ্যোগই দৃশ্যমান হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
জেপি/এইচএ/