ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৫ মিনিটে ২৬ জনের প্রাণদণ্ডের রায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
৫ মিনিটে ২৬ জনের প্রাণদণ্ডের রায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা- ছবি জিএম মুজিবুর

নারায়ণগঞ্জ থেকে: সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তা। চাঁদমারী এলাকায় নতুন কোর্টে দেখে শুনেই লোকজনকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর সাইরেন বাজলো। প্রিজন ভ্যানে আনা হলো দুই কারাগার থেকে সাত খুনের আসামিদের। র‌্যাবের চাকরিচ্যুত উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তা ছাড়া বেশিরভাগ আসামিকেই ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা হয়েছে।

প্রথমে কয়েকজন ঢোকানোর পর এজলাসে থাকা লোহার খাঁচার বাইরে রাখা হয় তারেক, আরিফ ও রানাকে। এরপর বাকিদের সঙ্গে সবশেষে হেলমেট পরিয়ে ঢোকানো হলো নূর হোসেনকে।

বেশিরভাগ আসামি ভয়ার্ত চোখে আদালতের পানে তাকিয়ে। যদিও তখনও আদালত বসেননি। কিন্তু শুরু থেকে নির্বিকার ছিলেন র‌্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা। আর নুর হোসেনকে দেখা গেছে কিছুটা উচ্ছ্বল।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ০৩ মিনিটে আদালত বসলেন। এরপর আসামিদের হাজিরা ডাকা হলো। সকাল ১০টা ০৫ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু করলেন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ জেলা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন। বললেন, অভিন্ন দু’টি মামলার সাজা একইরম। এরপর সাজা ঘোষণা শুরু করেন।

৫ মিনিটের ওই রায়ে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের দায়ে প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের বরখাস্তকৃত তিন উধ্র্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর পরই নুর হোসেন খাঁচার ফাঁক গলে এগিয়ে কথা বললেন তারেক সাঈদের সঙ্গে। কি যেন কথা শেষে কান্নারত অন্য আসামিদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন নূর হোসেন। কারও মাথায় কিংবা পিঠে হাত বুলিয়ে। আবার পুলিশের সঙ্গেও আগ বাড়িয়ে কথা বললেন নুর হোসেন। কিন্তু তার মধ্যে ভয়, টেনশন কিংবা হতাশার ছবি দেখা যায়নি।

এরপর পুলিশ সদস্যরা আইনজীবী ও সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে একে একে সকল আসামিকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যান। পরে গাড়িতে ওঠানোর সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের মারতে উদ্যত হন আসামি মোখলেসুর রহমান।

আসামিদের নিয়ে যাওয়ার পর আদালতের বাইরে শত শত উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়। ফাঁসির রায় কার‌্যকর চেয়ে মিছিলও করেন আইনজীবীরা।

এতোসব ভিড়ের মাঝে সন্তুষ্টি আর আনন্দের কথা জানান নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। কিন্তু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ে সুস্মিতা সরকার। কারণ, ফাঁসির রায় হলেও তার বাবাতো আর ফিরে আসবেন না। বার বার এ ধরনের  কথা কান্না করছিলেন সুস্মিতা।

তবে বাবার বীরত্বের কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি তিনি। সুস্মিতা বলেন, ‘বর্তমান সমাজে এমন কেউ আছেন কি-না জানি না, যিনি নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে অচেনা লোককে বাঁচাবেন। যিনি সব সময় দেওয়ানি মামলা করতেন, সেই তিনি অন্যের জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন। বাবার এ বীরত্বের জন্য গর্ববোধ করি’।

চন্দন সরকারের ড্রাইভার নিহত ইব্রাহীমের মাও এসেছিলেন আদালত অঙ্গনে। তিনিও রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। তবে পুত্রশোক এখনো ভুলতে পারেননি। তিনিও চান, দ্রুত রায় কার‌্যকর।

কিন্তু কয়েকজন আসামির মতো প্রায় নির্বিকার তাদের আইনজীবীরাও। আইনজীবী খোকন সাহা এবং আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের কি করার আছে? আমাদের কাজ হচ্ছে, আসামিদের আইনি সহায়তা দেওয়া। সেটি দিয়েছি। আদালত যেটা মনে করেছেন, সে অনুসারে রায় দিয়েছেন। এ নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। আসামিরা এখন যদি মনে করেন, তাহলে আপিল করবেন। তবে নূর হোসেন জানিয়েছেন, তিনি আপিল করবেন’।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
ইএস/এজেডএস/পিএম/এএসআর

**
আপিল করবেন নূর হোসেন
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।