জানা যায়, সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদার সঙ্গে সখ্য তৈরি করে সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীনুল কাদির। কিন্তু এরপরও সংবাদ পরিবেশন করায় নাজমুলের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে চলেছেন ওসি।
চিরতরে নাজমুলকে পঙ্গু করে দেওয়ার সাজানো নাটক করে চলেছেন পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা। ওসি ছাড়া পুলিশের বাকি দুই কর্মকর্তা হলেন- ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিম ও আশুলিয়া-ধামরাই সার্কেলের এএসপি নাজমুল হাসান ফিরোজ।
এদিকে জানা গেছে, নাজমুলকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। এমনকি নির্যাতনের মুখে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করতে পুলিশ আবারও তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করছে। চূড়ান্তভাবে ফাঁসানোর জন্য নাজমুলের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
তবে কয়েক দিন আগেও আশুলিয়ার ওসি মোহসীনুল কাদিরকে নাজমুলের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখেছেন। জানা গেছে, সেই সময় তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সংবাদ পরিবেশন নয়, আশুলিয়া থানার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে। এসব না শোনাই নাজমুলের জন্য কাল হয়েছে।
এদিকে কতিপয় গার্মেন্ট মালিকের প্ররোচনায় নাজমুলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওসি নিজেদের মতো করে মিথ্যা ও বানোয়াট রিপোর্ট তৈরি করে চলেছেন। দুই দিন আগেও যার সঙ্গে গলায় হাত দিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলেছেন, তার বিরুদ্ধে এখন সাজানো নাটক নিয়ে সব মহলে তুমুল আলোচনা চলছে।
এলাকাবাসী বলছেন, নাজমুলের দোষ তিনি আপোসহীন সাংবাদিকতায় ‘বন্ধু’ পুলিশ অফিসারকেও ছাড় দিতে বিন্দুমাত্র রাজি হননি। তাই আন্দোলনরত শ্রমিকদের হামলা-ভাংচুরের কবল থেকে গার্মেন্ট মালিক-কর্মকর্তাদের রক্ষায় পুলিশের মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির অভিযোগটিও গুরুত্বের সঙ্গে সংগ্রহ করছিলেন নাজমুল। বিষয়টি জানামাত্র ওসি মোহসীনুল কাদির বন্ধুত্বের অধিকার নিয়ে রিপোর্টটি প্রকাশ না করতে বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তাকে। বলেছিলেন, আশুলিয়া-ধামরাই সার্কেলের এএসপি নাজমুল হাসান ফিরোজ অনেক ক্ষমতার অধিকারী। তার ভিডিও ব্যবহার করে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলা হলে অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করে দেবেন তিনি।
কিন্তু বন্ধুত্বের এসব হুমকি-ধমকিকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেননি নাজমুল। বরং গার্মেন্ট মালিকদের কাছে লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি-সংক্রান্ত নানা অভিযোগের প্রমাণ সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
চাঁদাবাজির স্পর্শকাতর খবরটি ছাপা হলে এএসপি সার্কেলের পাশাপাশি ওসি মোহসীনুল কাদির নিজেও ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। বন্ধুত্ব চেহারার ওসি রাতারাতি হিংস্র মানবে পরিণত হন। থানার সবগুলো টিমকে লেলিয়ে দেন সাংবাদিক নাজমুলকে টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যেতে।
২৩ ডিসেম্বর যথারীতি আশুলিয়া থানার বাইপাইল এলাকায় নাজমুলকে পেয়েই পুলিশ সদস্যরা জঘন্যতায় মেতে ওঠে, যে যেভাবে পারে সেভাবেই লাথি, কিল, চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে, লাঠির আঘাতে থেঁতলে দেয় সাংবাদিক নাজমুলের সারা দেহ। রাতে নাজমুলের চোখ বেঁধে বন্ধুবর ওসি মোহসীনুল কাদির নিজেও মনের সাধ মিটিয়ে পিটিয়েছেন। বন্ধুর হাতের সৌহার্দ্যের ৠাকেটের বদলে বেতের মোটা লাঠিতে চলে সীমাহীন বর্বরতা।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৭
জেডএস