এ নিয়ে কর্মকর্তারা যেমন বিব্রত, তেমনি ক্ষুব্ধও। তাদের মতে, ইসি’র নিজস্ব ভবন প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আরো ছয় মাস।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশে নির্বাচন ভবনটি এখনো অফিস করার জন্য উপযুক্ত নয়। কর্মকর্তাদের টেবিল-চেয়ারসহ কিছুই বসানো হয়নি। দেওয়া হয়নি কক্ষ বরাদ্দও। পুরনো ভবন থেকে ফাইলও আনা হয়নি। নেই টেলিফোন, ইন্টারনেট ও কম্পিউটারে বিদ্যুতের সংযোগ। এছাড়া ভবনের ভেতরে ধুলোর আধিক্যে অনেকেই দুপুরে অফিস করে চলে গেছেন। খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও দুপুরেই চলে গেছেন।
কর্মকর্তাদের কক্ষ বরাদ্দ না হলেও যা পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে, তা খুবই অসম্মানজনক বলে মনে করছেন তারা। কেননা, উপ-সচিবের নিচের পর্যায় থেকে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের জন্য বাথরুম ও এসি’র ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রতিটি ফ্লোরের দুই পাশে কেবল দু’টি করে টয়লেট। যা তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণী থেকে শুরু করে সিনিয়র সহকারী সচিবদের ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হবে।
এমন নানা অব্যবস্থাপনায় নতুন ভবনে প্রথম দিন উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকেও মেঝেতে অফিস করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে বলেছেন, প্রকল্পের শুরুতে এ ভবনের ডিজাইন এমন ছিল না। সেন্ট্রাল এসি লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু রকিব কমিশন তা বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ বাতাস ঢোকারও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আবার দেওয়ালে দেওয়া হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের স্তর। ফলে প্রতিটি ফ্লোর এতো গরম হবে যে, কাজ করাই দুরহ হয়ে পড়বে।
উপ-সচিবদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষগুলোতেও রয়েছে অব্যবস্থাপনা। কেননা, নির্বাচন কমিশন অন্তত ১০টি শাখা নিয়ে কাজ করে। এক শাখার উপ-সচিব যে কক্ষ পেয়েছেন এক ফ্লোরে, কিন্তু তার শাখা অন্য ফ্লোরে। যেমন আইন শাখা ৬ষ্ঠতলায়, কিন্তু যুগ্ম সচিব ও উপ-সচিব বসবেন চতুর্থতলায়।
আবার শাখার জন্য কাঁচের দেওয়াল ঘেরা কক্ষ রাখা হচ্ছে। সেই কক্ষের চেয়ে সংশ্লিষ্ট ফ্লোরের ফাঁকা জায়গার আয়তন বেশি। তাই গাদাগাদি করে শাখায় কাজ করতে হবে।
অথচ সিইসি’র জন্য রয়েছে এটাচড বাথরুম, মিটিং রুম এবং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খাটসহ কক্ষ। নির্বাচন কমিশনারদের জন্যও আলিশান কক্ষ রাখা হয়েছে। সচিবের জন্য রয়েছে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খাটসহ কক্ষ।
সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘একটি ভবনের অনেক কাজ থাকে। পরিকল্পনা কমিশনে আমাদের ভাড়া করা ভবনে কাজ করতে হয়েছে। সেখানে অনেক ফাইল মেঝেতে ফেলে রাখতে হয়েছে। তাই নতুন নিজস্ব ভবনে এসেছি। এখানো অনেক কাজ বাকি আছে। ধীরে ধীরে সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে’।
রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশে ২১৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। ২ একর ৩৬ শতাংশ জমিতে ইলেকশন রিসোর্স সেন্টার (ইআরসি) নামে ইসি’র নিজস্ব ভবনটির দু’টি অংশ রয়েছে। এর একটি অংশ হচ্ছে ১২তলার ইটিআই (নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) ভবন। অন্যটি ১১তলার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন-বিইসি ভবন। বিইসি ভবন নির্মাণের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু বর্তমান কমিশন তার মেয়াদেই নতুন ভবনে অফিস করবেন বলে শেষদিকে তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করা হয়।
১৯৭৩ সাল থেকে শেরে বাংলানগরের পরিকল্পনা কমিশনের ৫ ও ৬ নম্বর ব্লক ভাড়া করে কাজ চালিয়ে আসছিল নির্বাচন কমিশন। এর আগে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক নির্বাচন অফিস ছিল মোমেনবাগে। সেটি মুক্তিযুদ্ধের সময় বোমা মেরে পুড়িয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধারা। এতে এক নৈশপ্রহরী নিহতও হন।
**নির্বাচনের সুবাতাস চলমান থাকবে: সিইসি
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
ইইউডি/এএসআর