রোববার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে বক্তব্য দিতে শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। ১ ঘণ্টা ৪ মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ-মুক্ত একটি সুখী, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, ন্যায় ও ন্যায্যতাভিত্তিক, জ্ঞান-নির্ভর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার দারিদ্র্য নিরসন এবং আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণকে উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্যতম কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত বছরসমূহে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা বজায় রেখেছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। সরকারের সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, প্রাজ্ঞ রাজস্ব নীতি ও সহায়ক মুদ্রানীতির প্রভাবে মন্দাত্তোর বিশ্ব-অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চলমান সংকট সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে দেশে গড়ে ৬.৫ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৫ দশমিক চার-তিন শতাংশ বেশি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সম্পাদিত সংস্কারের ফলে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬ সাল শেষে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সকল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বৈদেশিক ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক এবং বিডিবিএল-এর সকল শাখায় ‘অনলাইন কোর ব্যাংকিং সলিউশন’ চালু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরে ৬ দশমিক ছয়-সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশের ইপিজেডসমূহে ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরে ৪০৪ দশমিক তিন-ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রকৃত বিনিয়োগ হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ ব্র্যান্ডিংয়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার বিদ্যুৎসুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত ৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ায় বিদ্যুতের মোট স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ১৫ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুতের সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে ২ হাজার ৮৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নির্মাণাধীন ছয়টি বিদুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে।
তিনি বলেন, সবার জন্য খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বতর্মান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ২০০৮-০৯ অর্থ-বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৩৩ লাখ মেট্রিকটন। ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রায় ৪ কোটি মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নে সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র, শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র’-এই দর্শনকে সামনে রেখে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তর যথা- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনসমূহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখা হয়েছে এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামে ‘কর্ণফুলী’ এবং কুমিল্লায় ‘লালমাই’ নামে নতুন উপজেলা গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এর নির্মাণকাজ ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে সমাপ্ত হবে। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর নাগাদ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে।
** জঙ্গিবাদ নির্মূলে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
এসকে/এসএম/এমজেএফ