ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উচ্ছেদ ঠেকাতে আন্দোলনে নামতে পারে হকার সংগঠনগুলো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
উচ্ছেদ ঠেকাতে আন্দোলনে নামতে পারে হকার সংগঠনগুলো হকার উচ্ছেদের পর ফাঁকা গুলিস্তানের ফুটপাত; ছবি- সুমন

ঢাকা: রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনের নেতৃত্বে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে ফুটপাতের অবৈধ হকার উচ্ছেদ অভিযান। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে রাস্তার ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকান দিয়ে বসা হকারদের দৌরাত্ম্য কমাতে মেয়র কিছুটা সফলতা অর্জন করতে পারলেও ভিন্নমত হকার নেতাদের।

মেয়রের হকার উচ্ছেদের এই উদ্যোগকে অবৈধ দাবি করে তারা বলছেন, পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ গ্রহণযোগ্য নয়। উচ্ছেদ বন্ধে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়া হবে বলে জানান তারা।

 পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে যে কোন সময় নতুন আন্দোলন কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়ার কথা জানিয়েছে হকার্স সংগঠনগুলো।

হকার্স সংগঠন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে প্রায় ৬০টিরও বেশি হকার্স সংগঠন আছে।  এক একটি সংগঠনে ৫, ১০ হাজার থেকে শুরু করে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি হকার জড়িত।  কিন্তু সিটি কর্পোরেশন তাদের জন্য কোন ‍পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উল্টো ব্যবসা থেকে হকারদের বঞ্চিত করছে।  

সূত্র জানায়, গত বছরের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের এক বৈঠকে হকারদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করে তাদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।  কিন্তু মেয়র একথা জেনেও কোন ব্যবস্থা না করে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে।  

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার্স সমিতির সভাপতি কামাল সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ফুটপাতে বসা নিয়ে প্রতিনিয়ত পুলিশের সাথে আলাপ-আলোচনা ও যোগাযোগ করছি। তারা তো মেয়রের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তবে মেয়রের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। মেয়র আমাদের ফুটপাতে বসতে না দিলে আমরা অন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। ইতোমধ্যে আমরা শ্রমিক ইউনিয়ন, বামপন্থী দলসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে নিয়মিত বৈঠক করেছি। আমরা যে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারি।

তিনি জানান, রাজধানী যদি হকার উচ্ছেদ করতে হয় তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় তারা ফুটপাতে বসেই ব্যবসা পরিচালনা করবে। মেয়র আমাদের ফুটপাতে বসতে দিচ্ছে না সেই জন্য আমরা হকার্সদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী ২৫ তারিখে প্রথমে শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাথে বৈঠক করবো। সেখানে সকল হকার সংগঠনের নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে আমরা বড় আকারের সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তিনি আরো জানান, আগামী মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের কাছে প্রথমে স্মারকলিপি দেয়া হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর বরাবরও স্মারকলিপি দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি ছুটির দিনে বিশেষ করে শুক্র ও শনিবারে রাজধানীর পাঁচটি স্পটে হকারদের জন্য হলিডে মার্কেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখন যদি হকার না বসে তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই।

তিনি জানান, তাছাড়া হলি-ডে ছাড়াও সরকারি অন্যান্য ছুটির দিনে হকারেরা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। তবে আবার শর্ত আছে, সেটা হলো যেস্থানে হলি-ডে মার্কেট হকারদের জন্য উন্মুক্ত রাখা আছে, সেখানে স্কুল এবং অফিস খোলা থাকলে তারা বসতে পারবেনা। যেমন অাইডিয়াল স্কুল যদি খোলা থাকে তাহলে সরকারি ছুটি অথবা হলি-ডে দিনেও কোন মার্কেট বসতে পারবে না। তবে হকাররা যদি মেয়রের সাথে সমঝোতা করে বসতে চায় তাহলে তো ভালোই।

তাছাড়া তিনি আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নির্দেশে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। মেয়রের নির্দেশ অব্যাহত থাকলে সামনের দিনেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে তাদের (হকার) কর্মসূচি সম্পর্কে আমরা অবগত নই।

কাউছার আলী নামে গুলিস্থানের এক হকার বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীতে যেসব স্থানে হলি-ডে মার্কেট রাখা হয়েছে সেসব স্থানে কোন কাস্টমার পাওয়া যায় না। তাহলে আমরা কিসের ব্যবসা করবো। কাস্টমার না পাইলে সেখানে কি দোকান খুলে বসে থাকবো? তাছাড়া আমরা যেখানে কাস্টমার পাবো সেখানেই বসার নির্দেশ দেয়া হোক।

তিনি বলেন, আমরা ব্যবসা করে যা আয় করবো প্রয়োজনের সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ট্যাক্স দেব। তারপরেও আমাদের ভালোভাবে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।

হকার সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক আবুল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসায়ের উপযোগী না হলে হলি-ডে মার্কেট করলে হকারদের কি লাভ হবে। তাছাড়া এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন আমাদের সাথে কোন কথাবার্তা বা বৈঠক পর্যন্ত করেনি। অচিরেই হকারদের সমস্যা সমাধান না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেব।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব বাংলানিউজকে বলেন, ছুটির দিনে গুলিস্তান লিংকরোড, মুক্তমঞ্চ, শিল্পকলা একাডেমীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হকার বসার নির্দেশনা আছে। তারা না বসলে কারো কিছুই করার নেই। তবে তারা ফুটপাতে বসতে পারবে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন মুঠোফোনের মাধ্যমে বাংলানিউজকে জানান, আমরা ইতোমধ্যে গুলিস্তান এবং মতিঝিলে পুরোদমে ফুটপাত উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছি। তবে কর্মদিবসে কোন হকারদের এসব স্থানে এলাউ করা হবে না।

হকারদের আন্দোলনের কথা জানালে তিনি বলেন, তারা (হকার) যদি অধিকারের জন্য নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে তাহলে করুক। সেখানে আমার কোন কিছু করার নেই। ইতোমধ্যে তাদের জন্য পুনর্বাসন এবং হলি-ডে মার্কেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে আন্দোলন করা হবে, এই কথাগুলো হকার্স সংগঠন বলতে পারেনা, এগুলো চাঁদাবাজদের কথা। হকাররা তো তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যেসব চাঁদাবাজ, সুবিধাবাদী এসব আন্দোলনের কথা বলছে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।

জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নির্দেশ অনুযায়ী ছুটির দিন ব্যতীত অন্যদিন অফিস টাইমে রাস্তায় কোন হকারকে বসতে দেয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
ওএফ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।