ব্রেক করে কোনোমতে পিকআপটি থামালো এর চালক। কিন্তু বাসের হেলপার নিজের অপরাধ ভুলে উল্টো পিকআপ চালককেই কয়েকটা কিল ঘুষি দিলেন।
এভাবে তাড়াহুড়ো করে রাস্তার মাঝখানে যাত্রী নামানো, অন্য গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ঘটনা এবং এসব কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির চিত্র প্রতিনিয়তই চোখে পড়ছে রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতে।
যাত্রীদের অভিযোগ, বাস বা লেগুনার হেলপাররা যাত্রীদের নামানোর সময় কখনও রাস্তার পাশে সাইড করতে চায় না। অন্য বাস বা লেগুনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার কারণে, চালকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাঝ রাস্তায় যাত্রী ওঠানামা করায়।
তাপসী নর্দ্দা বাসস্ট্যান্ডে নামবেন। অনেকটা জোর করেই বাসের হেলপার রাস্তার মধ্যেই নামিয়ে দিলো তাকে। এ সময় পেছনে থাকা বাইকের চাকা এসে লাগলো তার পায়ে। তাৎক্ষণিক ব্রেক চেপে কোনোমতে দুর্ঘটনা ঠেকায় মোটরসাইকেল আরোহী।
রাস্তা পার হয়ে তাপসী বলেন, আর বলবেন না। বাস থেকে নামার আগে আমার দুশ্চিন্তা শুরু হয়, কিভাবে নামবো, কেমন করে নামবো। এখন মোটরসাইকেল বেশি হওয়ায় রাস্তায় নামতে অনেক সমস্যা হয়। রাস্তার মাঝে নামতে গেলেই মোটরসাইকেল চলে আসে। সরকার উচিত গণপরিবহনের এমন অনিয়ম দ্রুত বন্ধ করা।
যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাজধানীতে এভাবেই চলাচল করছে গণপরিবহনগুলো। মামলা জরিমানা করেও নগরীতে পরিবহনের এ নৈরাজ্য ঠেকাতে পারছে না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
ডিএমপি ট্রাফিক দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, যত্রতত্র গাড়ি থামানো পরিবহনের গুরুতর অপরাধ। ডিএমপিতে প্রতি মাসে এই অপরাধের কারণে চার হাজার মামলা হয়। কিন্তু এরপরও পরিবহনের এমন প্রবণতা কমাতে পারছি না। কারণ চালকদের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা বেশি। এর জন্য প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা। আইন দিয়ে যত্রতত্র গাড়ি থামানো বন্ধ করা কষ্টকর। এরপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক দক্ষিণের উপ-কমিশনার (ডিসি) লিটন কুমার দাশ বলেন, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় ‘মোটরযান আইন ১৩৭ ধারা’য় মামলা দেওয়া হয়। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা প্রসিকিউশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শাস্তি প্রদান করে থাকেন।
তিনি বলেন, ইদানীং গণপরিবহনে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা অনেক বেড়েছে। ঢাকায় যানজট তীব্র হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনা করে ডিএমপি নতুন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। এক মাসের মধ্যে ডিএমপি’র নিজস্ব উদ্যোগে নগরীর সকল বাস স্টপে সাইনবোর্ড ও নির্দেশনা সম্বলিত চিহ্ন টাঙ্গিয়ে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামার জায়গা সুর্নিদিষ্ট করা হবে। সুনির্দিষ্ট স্থানে কয়টা গাড়ি থামবে, কোথায় থামবে সেটা লেখা থাকবে। এতে গাড়িগুলো সঠিকভাবে চলবে। যাত্রীদের পরিবহনের জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়াতে হবে না। যানজটও অনেকটা কমবে চলাফেরা সহজ হবে'।
‘আগেও এ ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো, সেগুলো সচেতনতার অভাবে থেমে গেছে। এবার কঠোরভাবে মেনে চলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। গাড়ি থামানোর জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান ব্যবহারের ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশ তৎপর থাকবে’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৭
এমসি/আরআই