ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পঙ্গু বাবার ভিক্ষার টাকায় চলে সন্তানদের পড়ালেখা

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
পঙ্গু বাবার ভিক্ষার টাকায় চলে সন্তানদের পড়ালেখা পঙ্গু মো. আব্দুল মান্নান- ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: শীতের রাতে আকাশ থেকে অঝোরে ঝরছে কুয়াশা। রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টে লাল-সাদা বাতি জ্বলছে। ঘণ্টা খানেক আগেই রাতের ট্রেন একতা এক্সপ্রেস যাত্রী নিয়ে রওনা দিয়েছে রাজধানীর উদ্দ্যেশে।

সারাদিন ভিক্ষা করে ক্লান্ত শরীরে একটু বিশ্রাম বা ঘুমের প্রয়োজন। শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে থাকলে কুয়াশায় ভিজতে হবে।

তাই গরম কাপড় না থাকায় পরনের একটি লুঙ্গি মাঝ থেকে কেটে বড় করে। কুয়াশা থেকে রক্ষা পেতে একটি গাছ তলায় শরীরে সেই লুঙ্গি জড়িয়ে ঘুমিয়ে পাড়েন পঙ্গু মো. আব্দুল মান্নান (৬৫)।

শরীরটা এতটাই ক্লান্ত যে পাশের চায়ের দোকানে উচ্চস্বরে গান বাজলেও গভীর ঘুমে মগ্ন থাকেন মান্নান। পঙ্গু মান্নানের চলাচলের একমাত্র ভরসা ভ্যানটি টিঅ্যান্ডটির খুঁটিতে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন।

শুক্রবার (১০ নভেম্বর) মধ্যরাতে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে এমন চিত্রই দেখা যায়।
পঙ্গু মো. আব্দুল মান্নান- ছবি: বাংলানিউজ
ঘুমন্ত মান্নানকে ডাক দিলে ঘুম থেকে হাসি মুখেই উঠেন তিনি। আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৫২ সালে কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া এলাকায় দারিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। আট বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় এক পল্লি চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় হারাতে হয় তার দুটি পা। পঙ্গু হওয়ার পর থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। এরই মধ্যে বিয়ে ও পরবর্তীতে তিন সন্তানের বাবা হন আব্দুল মান্নান।  

সারাদিন ভিক্ষা করে উপার্জিত টাকায় সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চেষ্টা করছেন। নিজ জেলায় ভিক্ষা করতে লজ্জা পান তাই গত ২২ বছর ধরে তিনি দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যেই ভিক্ষার উপার্জিত অর্থ বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

তিনি বলেন, আগে হাতের ওপর ভর করে চলাচল করতে হতো। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সময় লাগতো অনেক। আর চলাচলেও অনেক কষ্ট হয়ে যেতো। গত দুই বছর আগে এক ব্যক্তি চলাচল করতে একটি ভ্যান দান করেন। ভ্যানটি পেয়ে অনেক সুবিধা হয়েছে। এতে চলাচল করতে কষ্ট কম হয়। আবার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সময়ও অনেক কম লাগে।

তিনি আরও বলেন, ভিক্ষার টাকা দিয়ে বড় ছেলে মো. আশিকুর রহমান আশিক (১৭) খোকসা কলেজ থেকে ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। মেঝো ছেলে মো. আসিফ (১৪) কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে নবম শ্রেণি ও ছোট ছেলে মো. পিথিম রহমান (১১) বেতবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। ছেলেদের পড়াশোনায় আগ্রহ খুব বেশি, তাই ভিক্ষা করে হাজারও কষ্টের মাঝেও তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান তিনি।  

মেধাবী সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছেন পঙ্গু বাবা আব্দুল মান্নান।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
জিপি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।