শনিবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এরপরও শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে। মিয়ানমার সফরে গিয়ে ২৩ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নেপিদো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সংক্রান্ত চুক্তির যে খসড়া, তা তৈরি হয়ে গেছে। খুব শিগগির চুক্তিটা হবে। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে এরইমধ্যে।
মো. শহীদুল হক বলেন, সবকিছুর পরও মনে রাখতে হবে মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইছেন।
সেমিনারে সিপিডি’র চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সব ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কিভাবে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করা যায়, বিষয়টি নিয়ে আরও সিরিয়াস চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। কেননা, রোহিঙ্গারা দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে অবস্থান করলে আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়বে। রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
উচ্চতর পর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর জোর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সংকট সমাধানে প্রথমে আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিবো কি-না সে বিষয়ে। বর্তমানে রোহিঙ্গা সংকট ১৯৭০ বা ১৯৯০ সালের মতো নয়। এখনকার পরিস্থিতি খুবই ক্রিটিক্যাল। মুসলমান হিসেবে নয়, বাঙালি হিসেবে তাদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে। একটি সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এই গণহত্যা। এটা আর্ন্তজাতিক ইস্যু। এ সমস্যা সমাধানে যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে তা যথেষ্ট নয়। আরও উচ্চতর পর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) অনুপ চাকমা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু জটিল সমস্যায় রূপ নিয়েছে। এটা আমাদের বুঝতে হবে যে, রোহিঙ্গা ইস্যু অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা। মিয়ানমারে বিনিয়োগ করা রাষ্ট্রের মধ্যে চীন সবার প্রথম। এ কারণে চীন রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রশ্নে চুপ রয়েছে। সব দিক থেকে মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চীন।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কসোভো, সিরিয়ার মতো মিয়ানমারেও আন্তর্জাতিক সেনাবাহিনী পাঠানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত খালেকুজ্জামান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মাদ মুসা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক শিফা হাফিজা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭/আপডেট ১৬৪৪ ঘণ্টা
এমসি/এইচএ/
** ১০ মাসে রোহিঙ্গাদের পেছনে ব্যয় হবে ৭১২৬ কোটি টাকা