মিরপুর তালতলা বাজারে সড়কের পাশেই দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আলী আকবর। দু’টো বাস একসঙ্গেই এসে আগে-পরে অনেকটা আড়াআড়ি করে দাঁড়াল তার সামনেই।
এ অবস্থা শুধু তালতলা বা নাবিস্কোতে নয়। মগবাজার, মালিবাগ, মতিঝিল, শাহবাগ, কল্যাণপুর,ধানমন্ডিসহ রাজধানীর সব এলাকাতেই। এমনকি অভিজাত এলাকা গুলশানও এর ব্যতিক্রম নয়। যদিও অপেক্ষাকৃত কম ধুলা এখানে। তবে বাড্ডা রোডের পুরোটাই ধুলায় একাকার।
শুধু কি সড়কগুলোর অবস্থা এমন? তা কিন্তু নয়। মহল্লা ভেতরের সরু রাস্তাগুলোর চিত্রও একই। বর্ষা শেষ হয়ে গেল মাত্র কিছুদিন হলো। শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই সড়কে, রাস্তায়, গলিতে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা শুকিয়ে বাতাস পেয়ে হয়ে ওঠছে ধুলা। বলতে গেলে পুরো রাজধানীই এখন ধুলাময়। ফলে বাড়ছে শাসকষ্টসহ এলার্জিজনিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। সবচেয়ে কষ্টে পড়ছেন যারা শ্বাসনালীর রোগে ভুগছেন অথবা যাদের ক্রনিক চর্মরোগ রয়েছে। আর শিশুদের অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। হাসপাতালগুলো ভরে যাচ্ছে শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগী ও শিশুতে।
মিতুল আহম্মেদ নামের এক রোগীর সঙ্গে কথা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটডোরে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষায় কিছুটা আরামেই ছিলেন। কিন্তু শীত আসার আগে যে হারে ধুলাবালি বেড়েছে, এতে করে তার শ্বাসকষ্ট এবং এলার্জিও বেড়ে গেছে পাল্লা দিয়ে। শরীরে আইইজি’র পরিমাণ বেড়ে গেছে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে দশ গুণ।
‘একটা দেশের রাজধানী কী এমন হতে পারে? বাঁচতে এসে মরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে’-মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীর বাতাসে ধুলার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মূলত সিটি করপোরেশনের। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত পাঁচ কারণেই বাড়ছে বাসাতে ধুলার পরিমাণ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ, রাজধানীর বাইরে থেকে আসা ময়লাযুক্ত গাড়ি, নগরবাসীর অপরিচ্ছন্নতা এবং অব্যবস্থাপনা। আর সবচেয়ে বড় যে কারণ সেটি হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি ও সমন্বয়ের অভাব।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে তার এলাকার রাস্তা পরিস্কারের জন্য ১৪টি পানি ছিটানোর গাড়ি নামিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫০ কিলোমিটার সড়ককে আওতায় নিয়ে তারা কাজ চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বড় বড় সড়কগুলোকে তারা প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষটির জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার।
তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তাদের এ কার্যক্রমে কেবল সাময়িকভাবে ধুলা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। বরং রাস্তার পাশে ধুলোগুলো কাদায় পরিণত হচ্ছে। শুকিয়ে গেলেই আবার একই অবস্থা।
এদিকে দক্ষিণে এমন উদ্যোগ দেখা গেলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেই। তবে তারা উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে ময়লা, আবর্জনা সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন অংকের টাকা জরিমানা করেই কেবল কাজ সারছে। পানি ছিটিয়ে ধুলা কমানোর মতো উদ্যোগ এদের নেই।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি’র সহকারী বর্জ্য ব্যবস্থাপক সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, একথা সত্য যে রাজধানীর বাতাসে ধুলোমুক্ত করার জন্য কার্যকর সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই। আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ময়লা যাতে না হয় আমার সেজন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক্ষেত্রে উন্নয়ন সংস্থাগুলো, যারা সড়ক ময়লা করছে, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ময়লা হলে তা পরিষ্কার করছি। কিন্তু মানুষ সচেতন না। তাদেরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। কেবল সিটি করপোরেশন একটি শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে চাইলেও পারবে না। দক্ষিণের মতো আমরা পানি ছিটাচ্ছি না। তবে সড়ক পরিষ্কার রাখতে আমরা কিছু গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
বাংলাদেশ সময়:১৫১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
ইইউডি/জেএম