ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ওরে গাট্টি গোটাও, পুলিশ আইল!’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
‘ওরে গাট্টি গোটাও, পুলিশ আইল!’ পুলিশের ভয়ে কাপড়ের গাট্টি গোটাচ্ছেন বিক্রেতা। ছবি: মানসুরা চামেলী।

ঢাকা: 'ওরে গাট্টি গোটাও. পুলিশ আইল'!’ নিউমার্কেটের নিরাপত্তা কর্মীর এমন আভাস পেয়ে, কাপড়ের গাট্টি গোছাতে গোছাতে ক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে ফুটপাত ব্যবসায়ী আবু বকর বলেন, ‘আপা, দশ মিনিট পরে আইসেন, এখন সরতে হবে, পুলিশ আসতেছে।’  

আবু বকরের দেখাদেখি নিউমার্কেটের তিন নম্বর গেটের সামনে বসা ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। বিক্রি-বাট্টা ছেড়ে কাপড়ের গাট্টি লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই।


 
রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম মার্কেট নিউমার্কেট, গাউসিয়া ও চাঁদনীচক। মার্কেটগুলোর ভেতরে যেমন রমরমা ব্যবসা, তেমনি ফুটপাতেও। ফুটপাতের এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হকারদের দৌরাত্মে ফুটপাতে হাঁটাও দুস্কর।

চলতি বছরের মে-মাসে নীলক্ষেত, চাঁদনীচক, নিউমার্কেট ও  গাউসিয়ার ফুটপাত হকারমুক্ত ঘোষণা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তারপর বেশ কিছুদিন ফুটপাতে হকার বসতে দেখা যায় নি। এর দুই একজন ছালা বিছিয়ে কয়েকটি জিনিস বসানোর চেষ্টা করলেও পুলিশ আতঙ্কে থাকত সবসময়ই।
 
পুলিশের ভয়ে গাট্টি গোটাচ্ছেন বিক্রেতা।  ছবি: মানমুরা চামেলী।  তবে নিউমার্কেটের ফুটপাতে আবারো হকারদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনীচকের ফুটপাতে শীতের কাপড়. ব্যাগ, কাপড়, স্যান্ডেল, কসমেটিকস, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসতে দেখা যায় হকারদের। ফুটপাতে ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকায়, সারাক্ষণই হকার ও পুলিশের চলে চোর-পুলিশ খেলা।
 
নিউমার্কেটের তিন নম্বর গেটের সামনে শীতের পোশাক বিক্রি করছেন আনিসুর। ‘একশ, একদাম একশ- হাঁকডাঁক দিয়েই চলেছেন। পোশাকটি ১০০ টাকায় সস্তায় ভেবে বিক্রেতাকে ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়।
 
আনিস বলেন, পুলিশের আড়ালে ব্যবসা চলছে। যে কোনো সময় দৌড়াইতে হবে। তাই, সস্তায় দিচ্ছি। বসতে দিলে কি এমন দামে কাপড় বিক্রি করি।

কথা বলতে বলতে চিৎকার শুনে তার আধ খোলা কাপড়ের গাট্টি বাঁধতে শুরু করেন। ক্রেতাদের বলেন, আপারা অপেক্ষা করেন, আবার আসতেছি।
 
পুলিশের ভয়ে কাপড়ের গাট্টি গোটাচ্ছেন বিক্রেতা।  ছবি: মানসুরা চামেলী।  গাউছিয়া মার্কেটের সামনেও একই চিত্র দেখা গেল। হকাররা এই দোকান নিয়ে বসছে, আবার দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এমন দৌড়ঝাঁপের মধ্যেই ক্রেতাদেরও ভিড় দেখা গেল। হকারমুক্ত ফুটপাতের দাবি করলেও ক্রেতারা ফুটপাতে জিনিস কিনতে তাদের পিছপা নেই।
 
গাউছিয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা তাহের বাংলানিউজকে বলেন, এখানে কোনোভাবেই হকার আটকানো যাচ্ছে না। কিছু দিন ভালো চলছিল। আবার হকার বেড়েছে। আমরা এদের সঙ্গে গোল্লাছুট খেলছি বলা চলে। কিন্তু নিউমার্কেট এলাকায় জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য হকারমুক্ত ফুটপাত অনেক প্রয়োজন। এতে এলাকার যানজটের তীব্রতা কমবে।
 
পুলিশের বাধার মুখে ফুটপাতে বসার কারণ জানতে চাইলে অলক নামে এক হকার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ফুটপাতে হকার বসা বন্ধ হয়েছে, জনগণের হাঁটার বড় স্থান হয়েছে। কিন্তু আমাদের তো করে খাওয়ার কোনো উপায় হয় নি। আমরা যাব কই? যতো দিন কোনো উপায় না হবে, ততদিন এভাবে ব্যবসা চলবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এমসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।