ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কদর এখন লেপ-তোষক ফেরিওয়ালাদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
কদর এখন লেপ-তোষক ফেরিওয়ালাদের লেপ তোষকের ফেরিওয়ালা

নীলফামারী: ফেরিওয়ালার হাঁক-ডাক বেড়েছে, তবে দুল, চুড়ি, রেশমি সুতার নয়, থালা-বাসন বা সবজিওয়ালারও নয়। এ ডাক মৌসুমী ফেরিওয়ালাদের, যারা শীত এলে রিকশা ভ্যানে লেপ-তোষক বিক্রিতে নেমে পড়েন।

মহাজনদের কাছ কমিশনে কিনে বিক্রি করেন গ্রামের বাড়ি বাড়ি আর শহরের পাড়ায় পাড়ায়। এসব ফেরিওয়ালা নগদ টাকা ছাড়াও কিস্তিতেও লেপ-তোষক বেচেন।

শীত মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই কিস্তির সে টাকা পরিশোধ করেন পুরুষ ও গৃহবধূ ক্রেতারা।

নীলফামারীর জনপদে দিন দিন শীত বাড়ছে। রাতে ঘুমোতে গেলে জড়াতে হচ্ছে কাঁথা, লেপ বা কম্বল। শীতের এ আগমনী বার্তায় কর্মব্যস্ততা ও কদর বেড়েছে লেপ-তোষকের ফেরিওয়ালাদের। বাজারের বেডিং আর কটনশপ দোকানগুলোতে কারিগরদেরও ব্যস্ততা বেড়েছে সেগুলো তৈরিতে। শহরের দোকানগুলোতে নতুন তৈরির পাশাপাশি কেউ কেউ আসছেন পুরনো লেপ ঠিক করে নিতেও।

সরেজমিনে গেলে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে লেপ-তোষক বিক্রেতা আজমল হোসেন (৪২), শাহিনুর রহমান (৪৫) ও রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে মহাজনের কাছ থেকে লেপ-তোষক নিয়ে রিকশা ভ্যানে তুলে গ্রামের পথে চলি। হাঁক-ডাক ছেড়ে সেগুলো বিক্রি করি। রিকশা ভ্যানের ভাড়া ও মহাজনের টাকা পরিশোধ করে দিনে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ দিয়ে আমাদের সংসার চলে। কিস্তিতে লেপ-তোষক বিক্রি করলে মহাজনের খাতায় তুলে রাখা হয়। মৌসুম শেষে সে টাকা পরিশোধের দায়িত্ব থাকে আমাদের’।

জেলার বড় মোকাম সৈয়দপুর উপজেলা বাজারের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক ও গোলাহাট বাজারের লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, কারিগররা কেউ তুলো ধুনছেন, কেউ ব্যস্ত লেপ-তোষক সেলাইয়ের কাজে, কেউ আবার সূচের ফোটায় লেপে হরেক রকমের ডিজাইন ফুটিয়ে তুলছেন।

গোলাহাট বাজারের কারিগর আসগার আলী বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে এ কাজ করছি। শীত এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। এবারো ভালো অর্ডার পাচ্ছি। তাই ছেলেদের নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত সময় পার করছি’। লেপ তোষকের ফেরিওয়ালারা আসগার আলীর ছেলে এরশাদ বলেন, ‘তুলার মান ও পরিমাণের ওপর লেপ তৈরির খরচ নির্ভর করে। একটি ডাবল লেপ বানাতে ৩/৪ কেজি তুলা লাগে। লেপে সাধারণত কার্পাস তুলা ব্যবহার করা হয়। মধ্যম সাইজের লেপপ্রতি ১৫০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়’।

লেপ তৈরি করাতে আসা নতুন বাজারের কুলসুম বলেন, ‘কার্পাস তুলার একটি লেপের অর্ডার দিয়েছি। কাপড়, তুলা, মজুরি মিলে ৯০০ খরচ পড়ছে, যা খুব একটা বেশি নয়’।

শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের রাব্বি বেডিংয়ের মালিক মেরাজ বলেন, এবার একটি মধ্যম সাইজের লেপ তৈরিতে ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা ও তোষকে ৭০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা খরচ পড়ছে। একটি লেপ বিক্রি করে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।

দাম এখন সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

তবে শ্রমিকদের মজুরি ও তুলাসহ কাঁচামালের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকায় এবার দাম বাড়বে না বলে মনে করেন শমসের কটনশপ স্টোরের লেপ-তোষক ব্যবসায়ী শমসের।

তিনি বলেন, ‘সবকিছু ডিজিটালাইজড হওয়ায় হাতে তৈরি লেপ-তোষকের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে। তারপরও শীতে এর কদর ও আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়’।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এবার লেপ-তোষক তৈরির মূল উপাদান কার্পাস তুলা ১০০-১২০ টাকা, বোমা তুলা ৮০-১০০ টাকা, চাদর তুলা ৬০-৮০ টাকা এবং গার্মেন্টস তুলা ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।