তেল ভাঙানো ঘানির সাথে ঘুরে চলেছেন মো: আরশাদ আলী (৬০)। বাংলানিউজের সাথে আলাপকালে এমনটাই বলছিলেন তিনি।
অতীতে তেলবীজ থেকে তেল উৎপাদনের জন্য কোনো প্রযুক্তিগত যন্ত্র বা মেশিন ছিল না। কিন্তু প্রয়োজন তো আবিষ্কারের জননী। সে প্রয়োজন মেটাতেই এক সময় মানুষ উদ্ভাবন করলো ঘানির। যা ধীরে ধীরে একটি ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে স্থান করে নেয় সমাজে। ন্যানো টেকনোলজির এই যুগেও ওয়েল মিলের দৌরাত্ম্যের মধ্যেও তেলভাঙা ঘানি কোনোমতে টিকে আছে গুটিকয়েক লোকের হাত ধরে। তবে খুব বেশিদিন টিকতে পারবে—সে সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। বলতে গেলে ঘানি আজ বিলুপ্তির পথে এসে দাঁড়িয়েছে।
আর এই বিলুপ্ত-প্রায় ঘানিটানা পেশাকে টিকিয়ে রাখতে চলতি স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছেন আরশাদ আলী। সারাদিন একটানা ঘানি টানাই যার কাজ। কলুর বলদের (যে গরু দিয়ে ঘানি টানা হয়) চোখ থাকে ঠুলিতে বাঁধা। শক্ত কাঠের জোয়াল কাঁধে নিয়ে ঘুরে চলেছে আপন মনে। সেই সাথে ঘুরে চলেছেন আরশাদ আলেও। কিছ সময় পর পর হাত বুলিয়ে, নেড়ে দিচ্ছেন সরিষার দানাগুলোকে।
দুটি ঘরে তিনটি ঘানি তার। আর গরু আছে মোট ছয়টি। এক ঘন্টা পরপর তাদের পালাবদল হয়। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘানি ঘিরে ঘুরতে হয় তাদের। সারাদিন তিনটি ঘানি ঘুরিয়ে প্রায় ৪০ কেজির মতো তেল সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে প্রতি কেজি তেল ২২০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
আরশাদ আলীর কথায়, ‘ঘানি ব্যবসায় এখন আর লাভ নাই। লাভ যা হয় তা গরুতে। সিজনের সময় গরু কিনে ঘানি চালাই আবার কোরবানীর আগে বেচে দিই। এতেই যা লাভ হবার তা হয়!’
তবে এখনো ঘানিতে ভাঙা তেলের চাহিদা অনেক। দৈনন্দিন রান্নাবান্না, বিভিন্ন প্রকার ভর্তা, আচার তৈরিতে এ তেলের জুড়ি নেই। তার উপরে ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে শীতকাল। হাত-পায়ে, শরীরে মাখার জন্য এ তেলের জুড়ি নেই।
মো: জসিম উদ্দীন আহমেদ নামের একজন তেলের ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, ধামরাইয়ের কবিরপুর থেকে তেল কিনতে এসেছেন তিনি। ঘানিতে ভাঙা তেল তার পরিবারের সবাই ব্যবহার করে তাই, এখানে এসেছেন তেল কিনতে।
তবে বর্তমান সময়ে মেশিনের কাছে ক্রমেই হারতে বসেছে এ শিল্প। কাঁচামালের দামের উর্ধ্বগতি, গরুর খাবারের অধিক দাম ইত্যাদি কারণে প্রায় বন্ধ হতে চলেছে এ ব্যবসা।
সকলেই চায় নিজেকে সুস্থ রাখতে, চায় রসনা তৃপ্তি নিতে; আর তাই আজকের সময়ে ঘানিতে ভাঙা তেলের জুড়ি নেই বলেও মনে করেন আরশাদ আলী।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৭
জেএম