আর তাই দুর্ঘটনায় মা-মেয়ে নিহত হওয়ার সাড়ে ১০ মাস পর ফের একই নদীতে প্রাণ গেলো তিন সন্তানের জননীর।
এ দুর্ঘটনার পর এবারও বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে স্পিডবোট চলাচল।
তবে অল্প সময়ের মধ্যেই এ সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট বোটচালক ও শ্রমিকরা।
এর মাধ্যমে অদক্ষ চালক দিয়ে এবং রাতে বেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়েই বোট চালনা, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও বাড়তি ভাড়া আদায়ের মতো কাজকর্ম ফের শুরু হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। জরুরি কাজের অজুহাতে প্রায় রাতেই ঝুঁকি নিয়ে বোট চালনার অভিযোগও পুরনো।
তবে শ্রমিকদের দাবি, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাতে সাহেবের হাট চ্যানেলে দুই বোটের সংঘর্ষে মা-মেয়ে নিহত হন। ওই দুর্ঘটনার পর সন্ধ্যার পর থেকে বোট চালনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রশাসন। যা মেনে নিয়েছিলেন বোট মালিক-শ্রমিকরা। একইভাবে গত ১০ নভেম্বর রাতে ট্রলার আর স্পিডবোটের সংঘর্ষে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সে রাতেও বোট চালানোর কোনো ইচ্ছে ছিলো না মালিক-শ্রমিকদের। তবে স্বজনের মৃত্যুর খবরে ভোলার উদ্দেশ্যে যেতে চাওয়া মানুষগুলোর অনুরোধেই বোট চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর ওই বোট চালনাই যেন এক মায়ের দাফনে যেতে চাওয়া আরেক মা জোসনা বেগমের মৃত্যুর কারণ হলো।
প্রতিদিন বরিশালের ডিসি ঘাট থেকে ভোলা, বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট থেকে ভোলা ও বুখাইনগর থেকে মেহেন্দিগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রীবাহী স্পিডবোট চলাচল করে। এসব ঘাট থেকে অনিয়মিতভাবে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটেও স্পিডবোট চলাচল করে থাকে।
বরিশাল ও ভোলার প্রায় ৩০০টি স্পিডবোট এসব রুটে চলছে। অভিযোগ রয়েছে, ইচ্ছেমতো যাত্রী নিয়ে এসব স্পিডবোটে পাড়ি দেওয়া হচ্ছে কীর্তনখোলা, কালাবদর, আড়িয়ালখাঁ, তেঁতুলিয়াসহ কয়েকটি বড় বড় নদী। যেসব নদীতে বর্ষা মৌসুমে প্রচণ্ড উত্তাল ঢেউ আর শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট থাকায় প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
এদিকে যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট পরলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
বরিশাল নৌ-ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মো. হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যার পরে লাইটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়া যেকোনো নৌ-যান চালনাই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে দিন-রাত যখনই হোক, দ্রুতগামী ছোট নৌ-যান চালনার ক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেট শতভাগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যা দুর্ঘটনা কবলিত বোটের কারো শরীরেই ছিলো না।
তবে প্রতিটি বোটের ভেতরেই লাইফ জ্যাকেট আছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। চালকদের দাবি, যাত্রাকালে বেশিরভাগ যাত্রীই শরীরে লাইফ জ্যাকেট পরতে ইচ্ছুক নন। আর নিয়ম ও নিরাপত্তার কথা তুললেই যাত্রীদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা লেগে যায়।
বরিশাল নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোতালেব বলেন, রাতে স্পিডবোট চালানো অনেক আগে থেকেই নিষিদ্ধ রয়েছে। গত ১০ নভেম্বরের দুর্ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নিয়ম উপেক্ষাকারীদের আটক করা হয়েছে।
স্পিডবোট চালানোর অনুমতি সেদিন যারা দিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, যাত্রীবাহী স্পিডবোট চালানোর বিষয়টি তাদের আওতাভুক্ত নয়। বোট চালানোর আগে চালকদের প্রশিক্ষণ ও সনদের ব্যবস্থা করা উচিত।
পাশাপাশি সময় উপযোগী নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিশ্চিত করে ও ধারণক্ষমতা অনুসারে যাত্রী বহন করলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব বলেও মনে করেন ওই নৌ- কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
এমএস/এএটি/এএসআর