এছাড়া পাঠ্যবই প্রকাশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা এবং বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন না করা ও এনসিটিবি’র প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করে টিআইবি। পাশাপাশি বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী বলেও মনে করে সংস্থাটি।
‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি): পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও প্রকাশনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানায় টিআইবি।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের উপস্থিতিতে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষক মোরশেদা আক্তার।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন এবং পাঠ্যবই প্রকাশের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়েছে। বিশেষ করে পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ১০টি এবং প্রকাশনার ক্ষেত্রে সাতটি পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ ধরা পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে দরপত্র নির্দেশিকা তৈরি, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, দরপত্র খোলা, সিএস তৈরি, কার্যাদেশ প্রদান, প্রতি লটের কাগজের হিসাব, কাগজ বরাদ্দপত্র জারি, কার্যাদেশ অনুযায়ী উপজেলায় বই সরবরাহের তালিকা তৈরি, বই প্রাপ্তি স্বীকার অনুযায়ী বিল পরিশোধের সুপারিশের জন্য সম্মানী গ্রহণ করা হয়।
এভাবে গত তিন বছরে ৫০ লাখ টাকা ৯৬ হাজার ৭০০ টাকা গ্রহণ করেছে এনসিটিবি কর্মকর্তারা।
এক প্রশ্নের জবাবে মোরশেদা আক্তার বলেন, সরকারি বাৎসরিক সম্মানীর বাইরে অবৈধভাবে মুদ্রণ কাজের সম্মানী চেয়ারম্যান থেকে এমএলএসএস পর্যন্ত গ্রহণ করে থাকেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো অফিসিয়াল নথি সংরক্ষণ করে না এনসিটিবি।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, যে অধ্যাদেশের উপর ভিত্তি করে এনসিটিবি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত, সেই অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্বশাসিত হওয়ার কথা। কিন্তু স্বায়ত্বশাসনের মর্যাদা কখনও পায়নি। বিধিমালা হয়নি। ক্ষণে ক্ষণে সরকারি আদেশে পরিচালিত হচ্ছে। যে কারণে পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা থাকে না।
তিনি বলেন, যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারের আদর্শের সমর্থক ব্যক্তিবর্গের প্রাধান্য থাকে। একটি বিশেষ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চাপের ক্ষেত্রে বই সংশোধিত ও পরিবর্তিত হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। এসব কারণে মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে দেশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাণ্ডুলিপি প্রণয়নে সক্ষমতা ও পেশাগত দক্ষতার ঘাটতি দেখা যায়। এছাড়া পরিদর্শন ও তদারকিতে ঘাটতির ফলে সব ক্ষেত্রে সময়মতো মানসম্মত বই সরবরাহ করা হয় না।
দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে গেলে দীর্ঘ মেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে জানিয়ে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, শিক্ষাখাতকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে।
এ সময় অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে এনসিটিবিকে একটি স্বাধীন কমিশনে রূপান্তর করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনসহ অন্যান্য বিষয়ে ১৬ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। নির্বাহী পরিচালক বলেন, স্বনামধন্য ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি করে একটি কমিশন গঠনের দায়িত্ব দিতে হবে।
কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত রাখা এবং সিলেবাস ও টেক্সটবুক কমিটির সদস্যদের যোগ্যতা ও মেয়াদ নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে এ সময়।
পাশাপাশি শিক্ষাক্রম প্রকাশ ও উন্মুক্তকরণ এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের এনসিটিবির সদস্য হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করেছে টিআইবি।
সম্পাদক, সংকলক ও লেখকের সঙ্গে চুক্তি প্রবর্তন ও চুক্তিতে কর্ম পরিধি, সম্মানীর পরিমাণ, কাজের মেয়াদ উল্লেখ এবং লেখকদের সম্মানী সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি দিয়ে নির্ধারণ, পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও প্রকাশনার প্রত্যেক ধাপ যথাযথভাবে নথিভুক্ত এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি প্রচলন এবং মুদ্রণ তদারকির জন্য জড়িক কর্মীদের কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া এনসিটিবি অধ্যাদেশ-১০৮৩ এর বিধিমালা প্রণয়ন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল অনুযায়ী এনসিটিবি কর্মীদের আচরণ বিধি প্রণয়ন, তদন্ত প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশের সুপারিশ করেছে টিআইবি।
*এসসিটিবি’র পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ: টিআইবি
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
এমআইএইচ/আরআই