ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেগমগঞ্জে ২ শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
বেগমগঞ্জে ২ শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন বেগমগঞ্জে ২ শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন

নোয়াখালী: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার লতিফপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নকল করতে না দেয়ায় দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন লাঞ্ছিত শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তারা।

রোববার (১২ নভেম্বর) বেগমগঞ্জ উপজেলার লতিফপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেএসসি পরীক্ষায় নকলে বাধা দেওয়ায় ওই দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন নকলকারীদের অভিভাবকরা।

এতে লিটন চন্দ্র দাস নামে এক শিক্ষক গুরুতর আহত হন। তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর শিক্ষক নাহিদা আক্তারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।  

মানববন্ধন-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছ নবী মানিক, শিক্ষক আবু জাফর, প্রাক্তন শিক্ষার্থী অ্যাডভোকেট এ বি এম ইউসুফ, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আবদুল কাদের ও ডা. আবুল কালাম প্রমুখ।

জানা যায়, লাঞ্ছিত দুই শিক্ষক জেএসসি পরীক্ষায় লতিফপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রোববার গণিত পরীক্ষার সময় কেন্দ্রের ভেতরে নকল করার চেষ্টা করে শিক্ষার্থীরা। এসময় এক ছাত্রীকে নকলে বাধা দেন পরিদর্শক লিটন চন্দ্র দাস। পরে ওই ছাত্রী বিষয়টি বাইরে তাদের অভিভাবকদের জানিয়ে দেয়।

একপর্যায়ে পরীক্ষা শেষে লিটন চন্দ্র দাস ও অপর শিক্ষক নাহিদা আক্তার হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় কেন্দ্রের সীমানার মধ্যে একদল হামলাকারী লিটন চন্দ্র দাসকে বেদম মারধর করেন। এসময় নাহিদাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে একটি কক্ষে দুই ঘণ্টা আটক রাখেন। পরে অন্য শিক্ষক ও লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা চলে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় শিক্ষক লিটন চন্দ্র দাসকে দ্রুত নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই কেন্দ্রের শিক্ষকরা মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) পরীক্ষায় পরিদর্শক হিসেবে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন-সমাবেশ করতে বাধ্য হয়। সমাবেশ থেকে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মাহবুবুল আলমের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। এসময় তিনি ঘটনা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

এদিকে লতিফপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী সচিব ও লাউতলি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন জানান, কেন্দ্রে নকল করতে বাধা দেওয়ায় ওই দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকরা মঙ্গলবারের পরীক্ষায় পরিদর্শক হিসেবে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

শিক্ষকদের একাধিক সূত্র জানায়, জেলার প্রায় সবগুলো কেন্দ্রে নকল চলছে। বেশিরভাগ কেন্দ্রে শিক্ষকরাও নকলে সহায়তা করছে। ভালো শিক্ষকরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। নকলে বাধা দিলে মানসিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে তাদের।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা খানম শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বহিরাগতরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার জন্য তিনি বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে অভিযুক্তদের নাম জানা না থাকায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।