এ অবস্থা রাজধানী ঢাকায় সিটিং সার্ভিসে চলা ‘আয়াত পরিবহন’ ও ‘বায়ান্ন পরিবহনের’। তারও আগে ‘ভিআইপি ২৭’ বাসে ওয়াই-ফাই সেবা দেওয়া হয়েছিলো, কিন্ত এখন নেই।
দুর্বল নেটওয়ার্ক ও বার বার ‘ডিসকানেক্ট’ ঝামেলায় এসব বাসের ওয়াই-ফাই সেবা ব্যবহারে যাত্রীদেরও অনাগ্রহ দেখা গেছে।
সরকারি গণপরিবহন বিআরটিসি বাসে ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে প্রথমবারের মতো ওয়াই-ফাই সুবিধা সংযোজিত হয়েছিলো। বিনামূল্যেই এ সুবিধা উপভোগ করতেন যাত্রীরা। কিন্তু ছয়মাস পার হওয়ার আগেই সেগুলো বিকল হয়ে যেতে শুরু করে।
এরপরে ওয়াই-ফাই দেখা যায় বায়ান্ন পরিবহন, আয়াত ও ভিআইপি ২৭ পরিবহনের বাসে। কিন্তু চালুর ছয়মাস পর থেকে সেবাটি বাসের গায়ে লেখা ঝুললেও বাস্তবে থাকে না।
একই অবস্থা ঢাকার বাইরের দূরপাল্লার রুটেও। হানিফ, সেন্টমার্টিন, দেশ ট্রাভেলস ও সিল্কলাইন পরিবহন কয়েকমাস ওয়াই-ফাই সেবা দিয়ে এলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ঠিকমতো ওয়াই-ফাই পাওয়া যাচ্ছে সদ্য চালু হওয়া এনা পরিবহনের হুন্দাই বাসগুলোতে। পরিবহনটি ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলছে।
গত এপ্রিল মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিলাসবহুল সিল্কলাইন ট্রাভেলসের বাসগুলোতেও ওয়াই-ফাই সংযোগ দিয়ে চালু করা হয়। কিন্ত সম্প্রতি কয়েকজন যাত্রী এ বাসে যাতায়াতের পর অভিযোগ করেছেন, কোনো ওয়াই-ফাই নেই।
ওই বাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘শুরুতে অনেক চমক নিয়ে নামে বাসগুলো। কিন্তু পরে আর তার খবর থাকে না’।
বিলাসবহুল সেবার জন্য পরিচিত গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসে গত বছরের মাঝামাঝি গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় চালু হয় ওয়াই-ফাই সংযোগ। কিন্তু এখন আর তা পাচ্ছেন না বাসটির যাত্রীরা।
বেসরকারি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরিরত সামসুদ্দিন মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, দূরপাল্লার হানিফ, সেন্টমার্টিন ও দেশ ট্রাভেলসে এখনও ওয়াই-ফাই সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকা-বগুড়া রুটের শাহ ফতেহ আলী বাসেও সব সময় ওয়াই-ফাই থাকে বলে জানিয়েছেন যাত্রী সালমান সামিল সাকিব।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক সামদানি খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, বাস চালুর সময় অনেকেই আকর্ষণ হিসেবে যাত্রীদের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা রাখেন। পরে এগুলো আর ‘কন্টিনিউ’ করেন না তারা।
আয়াত পরিবহনের একজন মালিক বলেন, ‘বাসে ওয়াই-ফাই সেবা দিতে বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর স্পন্সর নিয়ে এটি চালানো সম্ভব। কিন্তু বাসচালক ও ম্যানেজমেন্টে যারা থাকেন, তারাই এটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
বিআরটিসি বাসে ওয়াই-ফাই চালুর সময় ১০টি বাসে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যেতো। বিআরটিসি’র কর্মকর্তারা তখন জানিয়েছিলেন, পর্যায়ক্রমে সুবিধা আরো সম্প্রসারিত করা হবে। কিন্তু পরে উল্টো সংকুচিত হয়ে প্রায় দুই বছর এ সুবিধা বন্ধই ছিলো। গত জুলাই থেকে আবারও কয়েকটি বাসে ওয়াই-ফাই চালু করে স্টিকারে পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়।
কিন্তু বাসগুলোর যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, চলতি পথে পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন-ইন করে খুব কম সময়ই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পেরেছেন তারা।
উত্তরা থেকে প্রতিদিন এই বাসে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে যান খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘গত একমাসে বিআরটিসি’র ৩টি বাসে ওয়াই-ফাই পেয়েছি। কিন্তু সবগুলো বাসে ওয়াইফাই রাউটার ও পাসওয়ার্ডের স্টিকার লাগানো ছিলো’।
গত জানুয়ারি মাসে জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে কমলাপুরগামী আয়াত পরিবহনের বাসগুলো ওয়াই-ফাই সুবিধা দিয়ে চালু হয়। শুরুতে আয়াতের ৩০টি বাসেই তখন ভালোভাবে সংযোগ ব্যবহার করতে পেরেছেন যাত্রীরা।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) ফার্মগেটে অবস্থান করে আয়াত পরিবহনের ১০টি বাসে উঠে দেখা গেছে, কোনোটিতেই ওয়াই-ফাইয়ের ন্যূনতম চিহ্নটা পর্যন্ত আর নেই।
একই অবস্থা মতিঝিল-দুয়ারিপাড়া রুটের বায়ান্ন পরিবহনের বাসেও। গত বছরের শুরুতে তাদের বাসে ওয়াই-ফাই সংযোগ পাওয়া যেতো। এ সুবিধা ওই বাসে ছিলো মাত্র চারমাস।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
এসএ/এএসআর