জেলা কারাগার থেকে বিভিন্ন মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে অর্থ দেওয়ার পরই মুক্তি পেয়েছেন -এমন নৈরাজ্যকর ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকেই। এমন ঘটনায় শিকার হওয়া জামিনপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, যার কাছ থেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকু আদায় করে তবেই ছাড়া হয় কারাগার থেকে।
একাধিক জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন বাংলানিউজের কাছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই কারাগার থেকে মুক্তি দিতে শুরু হয় নানা গড়িমসি। চাওয়া হয় আসামির আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী নানা অংকের টাকা। টাকা না দিলে ভয়ভীতি দেখানো শুরু হয়, বলা হয় কালকে সকালে আপনার মুক্তি হবে। আবার বলা হয়, বাইরে গোয়েন্দা সংস্থার লোক রয়েছে, ডিএসবি রয়েছে যদি টাকা না দেন এখান থেকে বের হলে অন্য মামলায় আবারো আপনাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। এ ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে যার কাছ থেকে যেমন সম্ভব তেমন অর্থ আদায় করে চলেছে জেল নিরাপত্তাকর্মীরা।
সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হওয়া একটি মামলার সন্দেহভাজন আসামি রুবেল বলেন, আমাকে একটি মামলায় সন্দেহবশত আটক করা হয়। কিন্তু পরে আমি আদালত থেকে মুক্তি পাই। আদালত থেকে মুক্তির কাগজ আসার পরও কারাগার থেকে আমাকে মুক্তি দেয়া নিয়ে শুরু হয় গড়িমসি। এখান থেকে নানাভাবে বলা হয় বাইরে গেলে আমাকে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে, আটক করা হবে। পরে ৪ হাজার টাকা দেওয়ার পর আমার মুক্তি মেলে। এরকম অবস্থা সবার বেলাতেই। টাকা না দিলে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তিলাভের কোনো আশা একদমই নেই।
বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলা ছাড়াও ডাকাতি, চুরিসহ সব মামলায় আদালত থেকে মুক্তি পাওয়া আসামিদের বেলায় এমমনটা করা হয়। অনেক ভুক্তভোগীই এমন অভিযোগ করেছেন বাংলানিউজের কাছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, প্রশাসনকে অবহিতকরণের একটি নিয়ম চালু রয়েছে কারাগারে। সেখানে একজন মানুষের জামিন হলে সে কাগজ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা প্রশাসনকে অবহিত করেন তারা আর এতে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার লোক সেখানে গেলে তাদের দেখিয়েই বন্দিদের অনেকটা জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের অর্থ আদায় করে। এরপরই তাদের মুক্তি দেয়া হয়। অনেক বড় অংকের অর্থ আদায়েরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। টাকা না থাকলে বাড়ি থেকে টাকা আনাতে বলা হয় আসামিদের।
তিনি বলেন, যারা আটক বা গ্রেফতার হন, তারা সবাই কিন্তু অপরাধী নন। আর কেউ অপরাধী হলে তো আদালত রয়েছে। এভাবে জিম্মি করে অর্থ আদায় করাটা অনেকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের অন্যায় ও নির্মম অরাজকতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কারণ জামিন হবার পর কারাগার থেকে মুক্তি পেতে বাধা দেয়ার অধিকার বা তাদের জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অধিকার প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার নেই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের কারা তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার ঘোষ এ ধরনের ‘অভিযোগ সত্য নয়’ বলে দাবি করে বলেন, আমি পরিষ্কারভাবেই বলতে চাই এরকম কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ড করার কোনো সুযোগ নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে নেই। এখানে কর্মরত সবাই একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য। তবুও যদি কারো তথ্য প্রমাণসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে এবং আমাদের জানানো হয় তাহলে খতিয়ে দেখা হবে।
তিনি জানান, বাইরের কিছু চক্র এরকম কাজ করে থাকতে পারে। কিছুদিন আগে আমরা খবর পেয়েছি আমাদের এক আসামিকে অসুস্থ বলে তার বাড়ি থেকে বিকাশে টাকা আনিয়েছে বাইরের একটি চক্র। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
জেএম