এই ব্যর্থতার কারণেই রাখাইন রাজ্যের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ওয়েস্টার্ন কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল মাউং মাউং সোয়েকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোয়ি তিন্ত নেইং।
মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাস এসব তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দুপুরে বাংলানিউজকে জানান, ধারণা করা হয়েছিলো বা মিডিয়ায় এসেছে সোয়ে’র দায়িত্বের সময়ই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, দমন-পীড়ন অভিযান শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এটি থামাতে বা আন্তর্জাতিক চাপে তাকে সরানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল। বরং বিদ্রোহী গ্রুপের হাতে তাদের সেনা হত্যা হওয়ায় তাকে সরানো হয়েছে।
তিনি বলেন, দ্য আরাকান আর্মি, যাদের সংক্ষিপ্ত কোড ‘এএ’। শুধু আরাকান আর্মিই নয়। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে আরো বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। এদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
২০০৯ সালের ১০ এপ্রিলে প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধ বিদ্রোহী এই সংগঠনটি চীনের উত্তর-পূর্ব ও মিয়ানমারের সর্ব উত্তরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে কাচিন রাজ্যের স্বাধীনতার জন্য সরকারি বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছে। এদের মূল অবস্থান কাচিন রাজ্যে।
এরা গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের প্রায় ২ হাজার সেনাকে হত্যা করেছে। তাদের স্লোগান হলো আরাকানি মানুষের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ। তিনি বলেন, এটি ছাড়াও আরাকানের আরো ছোট ছোট অনেক বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নবাদী গোষ্ঠী সরকারের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত।
কর্মকর্তা আরও বলেন, মেজর জেনারেল মাউং মাউং সোয়েকে সরিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোয়ি তিন্ত নেইংকে আনা হয়েছে। তিনি কঠোর মনোভাবের ব্যক্তিত্ব বলে প্রচারণা রয়েছে মিয়ানমারের সামরিক মহলে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। সেখানে হত্যাযজ্ঞে সেনার জড়িত থাকার বিষয় উল্লেখ করা হয়নি।
একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগগুলো অস্বীকার করা হয়েছে রিপোর্ট। তাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মেজর জেনারেল মাউং মাউং সোয়েকে সরানো হলো, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এ নিয়ে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার অবকাশ নেই।
কর্মকর্তা আরও বলেন, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় চলমান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের ৩১তম সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির পরই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে। কবে নাগাদ চুক্তি হবে বলা কঠিন হলেও আশা করছি ২০১৮ সালের প্রথম দিকে হতে পারে। এ নিয়ে দু’দেশ কাজ করছে। মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যে অনড় মনোভাব তারা দেখিয়ে চলছিল তা থেকে সরে আসছে তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
কেজেড/আরআই