মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মুহাঃ গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা বিগত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মাথাপিছু জাতীয় আয়ের উচ্চতর প্রবৃদ্ধির ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দিনবদলের সনদ রচনা করেছেন, অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথনকশা সে সনদে প্রোথিত রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি ধারণ করে সরকার সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে’।
লিখিত উত্তরে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেশকিছু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। আমাদের রাজস্ব ও মুদ্রানীতি হবে একে অপরের পরিপূরক। মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে থাকে। কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য মুদ্রানীতিতে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত থাকবে’।
আওয়ামী লীগের অপর সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ভোক্তাবান্ধব ও রাজস্ববান্ধব ডিজিটাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্ভাবনীমূলক ও করবান্ধব পদক্ষেপ নিয়েছে সংস্থাটি। সহজ আয়কর পরিগণনায় ই-ক্যালকুলেটর ব্যবস্থা সংযুক্ত হয়েছে’।
‘মূল সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর আওতায় অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বিষয়ে অধিকতর সেবা দিতে ই-লার্নিং ও ভ্যাট হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। ভ্যাট বিষয়ক যেকোনো প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাব দিতে কল সেন্টার স্থাপিত হয়েছে, যার নম্বর ১৬৫৫৫।
নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা সৃষ্টি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে বিগত বছরগুলোতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বেড়েছে। ঋণের এ প্রবৃদ্ধি দেশের বেসরকারি খাতের উৎপাদনমুখী উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন এবং কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে বিগত বছরগুলেতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ (নিট) গ্রহণ কমেছে’।
‘গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ না নিয়ে পরিশোধ করেছে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, যা বাজেটে ঘোষিত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকার তুলনায় কম হারে ঋণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন সম্ভব হয়েছে’।
তিনি জানান, ব্যাংকগুলোর ঋণযোগ্য তহবিল বৃদ্ধি পাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) উত্তরোত্তর বাড়ছে। কাজেই সরকারের ঋণগ্রহণের ফলে বেসরকারি বিনিয়োগে ঋণপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে প্রতীয়মান হয়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) তথা মোবাইল ব্যাংকিংকে জনপ্রিয় ও সম্প্রসারণ করতে সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চার্জ সাধারণভাবে এজেন্টের অংশ, মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের ইউএসএসডি মূল্য এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অংশ- এ তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ইউএসএসডি মূল্য ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অংশ কমানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। এ দু’টি চার্জ কমানো সম্ভব হলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার চার্জ কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
এসএম/এএসআর
** সব ডাকঘরে ইএমটিএস সার্ভিস চালু হবে
** শিগগিরই মোবাইল ফোন রপ্তানি হবে