ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ধান কাটা আর পিঠার মেলায় নবান্ন উৎসব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
ধান কাটা আর পিঠার মেলায় নবান্ন উৎসব ধান কাটার উৎসবে অতিথিদের সঙ্গে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীরাও অংশ নেন। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: কাস্তে-কুলা হাতে কৃষাণ-কৃষাণী, পলো হাতে মাঝি, একতারা হাতে বাউল আর খেঁজুর রসের হাড়ি নিয়ে পথ চলছেন গাছিও। ঢোলের তালে তালে মাতোয়ারা নবীন-প্রবীণ সবাই। চলে রঙের খেলা-পিঠার মেলাও।

দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য এসব আয়োজনে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করেছে বগুড়া সদর উপজেলা প্রশাসন ও শাখারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। পুরো উৎসব জুড়ে ছিলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা।


 
বুধবার (১৫ নভেম্বর) ০১ অগ্রহায়ণের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির চিরায়ত এ উৎসব শুরু হয়। শুরুতেই বের হওয়া বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বর্ণিল সাজে অংশ নেন অসংখ্য এলাকাবাসী।

সকাল দশটার দিকে শাখারিয়া ইউনিয়নের পল্লীমঙ্গল বারুইপাড়া ইউনাইটেড হাইস্কুল মাঠে অন‍ুষ্ঠিত হয় উৎসবের মূল আয়োজন। অতিথি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়দের অংশগ্রহণে এ উৎসব মিলনমেলায় পরিনত হয়।
 
প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের বগুড়ার উপ-পরিচালক সুফিয়া নাজিম।
 
শাখারিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আজগর তালুকদার হেনা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হামিদুল ইসলাম।
 
উৎসবে দেখানো হয় নাটকও। বিভিন্ন দৃশ্যকল্পে দেখা গেছে, গ্রামের এক কৃষক বাড়ির নবান্ন উৎসবে শহুরে বিয়াইনকে নাইওর আনা হয়েছে। তবে বিয়াইন এ লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত নন। তাকে ভিনদেশি সংস্কৃতি থেকে বের করে এনে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন বিয়াই।
 
দিনভর চলে রঙের খেলা-পিঠার মেলাও।  ছবি: বাংলানিউজনবান্নের গান, কবিতা, গীত, নৃত্য, বাউল গান, নাটকসহ নবান্ন কথনের মাধ্যমে বিয়াইন শেষ পর্যন্ত বাংলা সংস্কৃতির নবান্ন উৎসবের শেকড় সম্পর্কে জানতে পারেন। সেই সঙ্গে ভিনদেশি সংস্কৃতিকে বর্জন করে দেশি সংস্কৃতির লালন-পালনের আহ্বান জানান। পুরো বিষয়টি ফুটিয়ে তুলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা।  
 
শোভাযাত্রা শেষে অতিথিসহ অন্যরা পাশের একটি ধান ক্ষেতে চলে যান। কৃষক-কৃষাণী সেজে কাস্তে হাতে ধান কাটেন তারা। এ সময় অনেকেই মাথায় গামছা পেঁচিয়ে নেন। মাথায় পরে নেন তাপ থেকে রক্ষার মাতুল (স্থানীয় ভাষায়)। ধান কাটার এ উৎসবে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীরাও অংশ নেন।
 
এ উৎসবে বাড়তি মাত্রা এনে দেয় নাগরদোলা ও রঙের খেলা আর পিঠার মেলা। ইউনাইটেড হাইস্কুল মাঠের পিঠার মেলায় ৩৫টি স্টলে বাহারি পিঠার পসরা সাজিয়ে বসে শিক্ষার্থীরা।  
 
চিতই পিঠা, পাটিশাপটা, পুলি পিঠা, কুসলি পিঠা, দুধ কুসলি, দুধ পিঠা, তেল পিঠা, ভাপা পিঠা, তাল পিঠাসহ অর্ধশতাধিক সুস্বাদু রসালো পিঠা শোভা পায় স্টলগুলোতে।

শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ও ইয়াসমিন আক্তার বাংলানিউজকে জানায়, নবান্ন উৎসবের সব আয়োজন ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছে, নিজেদের সংস্কৃতি জানতে পেরেছে তারা।
 
আয়োজকরা জানান, মূলত গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও নিজ দেশের সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতেই নবান্ন উৎসবের আয়োজন। ভিনদেশি সংস্কৃতিতে ঝুঁকে পড়ছে তারা। এ থেকে মুক্তি পেতে নতুন প্রজন্মকে নিজ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানানোও উৎসবের মূল উদ্দেশ্য।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
এমবিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।