চট্টগ্রাম মহসিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী প্রবীর এমনই একজন। তিনি চট্টগ্রামের শীতাকুন্ড থেকে এসেছেন মিষ্টি খেতে, আবার বাড়িতেও নিয়ে যাবেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৮০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে টিকে আছে বিনয় মিষ্টি। আকৃষ্ট করেছে দূর-দূরান্তের পর্যটকদেরও। দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকা মিষ্টি পরিণত হয়েছে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যে। জেলার সীমানা পেরিয়ে এ মিষ্টির সুনাম এখন দেশজুড়ে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে কথা হয় বিনয় কৃষ্ণ সাহার সঙ্গে। বয়স প্রায় শত বছর ছুঁই ছুঁই। এখোনো শক্ত হাতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তিনি। করছেন দু’হাতে সওদাগরিও। প্রথমে কথা বলতে আগ্রহী না হলেও পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে রাজি হলেন। জানালেন বিনয় মিষ্টির দীর্ঘ ইতিহাস।
তিনি বলেন, তখন তার বয়স ১০/১২ বছর। বাবা সত্যকান্ত সাহার হাত ধরেই দোকানে আসা। এরপর বাবাই শিখিয়ে দিলেন দুধের ছানা দিয়ে মিষ্টি তৈরির কৌশল। তারপর থেকে এখানেই জীবিকা। বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে কিন্তু বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসাকে হাতছাড়া করতে দিলেন না বিনয় সাহা। বরং গুণগত মান ঠিক আগের মতোই রাখতে চেয়েছেন সর্বদা।
বিনয় সাহা জানান, ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে মিষ্টির দোকানটি দিয়েছিলেন বাবা সত্যকান্ত সাহা। স্বাধীনতা যুদ্ধের ১০ বছর আগেও দোকানটি ছিল উপজেলার নয়ামাস্তি এলাকায়। কিছুদিন পর দোকানটি সাগরে তলিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় শিবের হাটে স্থানান্তর করা হয়। এখোনো সেখানেই আছে।
বিনয় বাবুর সঙ্গে কথা শেষে তার অনুমতিক্রমে মিষ্টি বানানোর ঘরে গিয়ে দেখা যায়- বিশাল কর্মযজ্ঞ। ১০/১২ জন কারিগরের দম ফেলার ফুসরত নেই। কেউ ছানা গোল্লা করছে, কেউ ভাজছে আবার কেউ ব্যস্ত প্যাকেটিংয়ে। কর্মরত কারিগর রফিক জানায়, এখানে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার পিস মিষ্টি তৈরি হয়। মিষ্টি গুলো বিক্রি হয় তিনটি দামে। আকারে সবচেয়ে বড়টি বিক্রি হয় ২০ টাকা, মাঝারি ১৫ টাকা ও একদম ছোট সাইজের মিষ্টি প্রতি পিস বিক্রি হয় ৬ টাকায়।
এ মিষ্টি কেজিতে বিক্রি হয়না, পিস হিসেবেই বেক্রি হয়। একদম খাঁটি দুধ দিয়ে নির্ভেজাল ভাবে বানানোয় দূর-দূরান্ত থেকে আসেন খরিদদারেরা। দোকানে মিষ্টি খাওয়ারত ফেনীর সোনাগাজী থেকে যাওয়া পর্যটক শেখ আবদুল হান্নান জানান, দামে একটু বেশি হলেও খুবই সুস্বাধু বিনয় বাবুর মিষ্টি। একদম খাঁটি দুধের ছানা দিয়ে তৈরি, কোনো ধরনের ভেজাল নেই।
মিষ্টির গুণগত মানের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিনয় সাহা বাংলানিউজকে বলেন, মিষ্টিতে কোনো ধরনের কৃত্রিম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়না। দুধ, পানি, চিনি আর সামান্য ময়দাই এ মিষ্টির উপাদান। আর এ কারণেই যুগ যুগ ধরে টিকে থাকা সম্ভব হয়েছে।
তৈরি প্রক্রিয়া-
কারিগর রফিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় মিষ্টির তৈরি প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, প্রথমে দু’দিন আগের পানিতে দুধ দিয়ে ছানা কাটতে হবে এরপর পরিষ্কার গামছায় ভিজিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর গামছা ছিপিয়ে জল সরিয়ে শুধু ছানা আলাদা করতে হবে। সাধারণত ৩০ কেজি দুধের একটি চাকে ৮ কেজির মতো ছানা হয়। এরপর ছানার সঙ্গে সামান্য পরিমাণে উন্নত মানের ময়দা মিশিয়ে গোলাকৃতি করতে হবে। এরপর চুলোয় গরম হওয়া চিনির শিরায় চুবিয়ে দিলেই ছানার গোল্লাটি তৈরি হয়ে যাবে মিষ্টিতে। এরপর পরিবেশন করা হয় গরম গরম।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭
এসএইচডি/বিএস