আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া থানা পুলিশের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থাগুলো গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
পুলিশ বলছে, আড়াই মিনিটের এই কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেওয়া চারজন পেশাদার খুনি। ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি‘র ফুটেজ পর্যালোচনা করে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে খুনিদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তবে এদের বাইরেও হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী থাকতে পারে বলেও আমরা ধারনা করছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। খুনিদের বিষয়ে বেশকিছু তথ্য পেয়েছি। খুব শিগগির আসামিদের গ্রেফতার করতে পারবো বলে আশা করছি।
গত মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাতে বনানীর ৪ নম্বর রোডের বি-ব্লকের ১১৩ নম্বর বাড়ির এমএস মুন্সি ওভারসিজ (রিক্রুটিং এজেন্সি) প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক হোসেন মুন্সিকে (৫০) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৩৯), মোখলেসুর রহমান (৩৫) ও মির্জা পারভেজ (৩০)।
এই ঘটনায় ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বানানী থানায় নিহতের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহত সিদ্দিক হোসেন মুন্সি রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় স্ত্রী জোৎস্না বেগম, দুই মেয়ে সাবরিনা সুলতানা ও সাবিহা সিদ্দিক, এবং ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে বসাবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি কিলিং মিশনে চারজন ছিল। তারা পেশাদার খুনি বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পরিকল্পনাকারী রয়েছে। হত্যার মোটিভ এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা জানায়, তিনটি বিষয় (ব্যবসায়িক, পারিবারিক ও স্থানীয়) সামনে রেখে তদন্ত চলছে। তবে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, অন্য কোনো এজেন্সি পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। এরজন্য বেশ কয়েকজন ব্যবসায়িকে নজরদারী করা হচ্ছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা গেলে মূল পরিকল্পনাকারীকেও গ্রেফতার করা হবে।
দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয় এমএস মুন্সি ওভারসিজ প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তা। এদের মধ্যে মির্জা পারভেজ (৩০) বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার সময় আমি বসের পাশের কক্ষেই বসা ছিলাম। একজন লোক বসের রুমে প্রবেশ করে এবং কিছু একটা বলে। তখন বস চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে যায়। এর পরপরই গুলি শব্দ শুনতে পাই।
বসকে মাটিতে পড়তে দেখে আমি চমকে উঠি। ওই ব্যক্তি আমাকে এসে বলে, ‘তুই কে?’ আমি বলি- ‘অফিসের স্টাফ’, এই বলতেই আমাকে গুলি করে। পাশের রুমে দু’জনকে গুলি করে। যাওয়ার সময় বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় দুর্বৃত্তরা।
দৌড়ে বসের কক্ষে গিয়ে দেখি বস রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। ‘পরে আমাদের ডাক চিৎকারে গেটের দারোয়ান এসে দরজা খোলে দেয়। ’
তিনি জানান, বসের সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতা আছে এমন কিছু কোনো দিন শুনিনি। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। ব্যবসায়িক লেনদেনও পরিষ্কার ছিল তার।
কারা কি কারণে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না- যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭
এসজেএ/বিএস