ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঝূকিপূর্ণ ২০০ কিলোমিটার রুটে নিরাপদ ট্রেন পরিচালনায় প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার।
অতিরিক্ত ব্যয়ের জবাব চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে। নভেম্বর মাসে অতিরিক্ত ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির জবাবও দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনের সার্বিক মান বজায় রাখাতে এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ চিনকি-আস্তানা-আশুগঞ্জ সেকশনের লুপ লাইন পুনর্বাসনেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এই রুটে মোট নবায়ন ও পুনর্বাসন কাজ ২০০ কিলোমিটার। এর আওতায় ১৭ কিলোমিটার লুপ লাইন ও ৩ কিলোমিটার মেইন লাইনের কাজ অন্তর্ভুক্ত।
সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মূল্যায়নে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর আগেও কয়েক ধাপে সময়-ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে রেললাইনটি পুনর্বাসন ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে। রেল পরিচালনায় গতি বাড়াতে জুলাই ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১৪ মেয়াদে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এ সময় ব্যয় ছিলো মাত্র ২৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
পরবর্তীতে বাজারমূল্য বৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া ব্যয়ে ঠিকাদার না পাওয়ায় আবারও ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরপর আবারও জুন ২০১৬ সাল নাগাদ ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। ভুল বশত এই প্রকল্পের আওতায় ৫ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন কাজ প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে। ফলে নতুন করে ৫ কিলোমিটার সিগন্যালিং ওয়ার্কসহ বিভিন্ন কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে আরও ৩৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে এই টাকা প্রয়োজন হতো না।
আইএমইডি সূত্র জানায়, সঠিকভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হলে এক বছর আগেই প্রকল্প সম্পূর্ণ হতো। দ্বিতীয় সংশোধনের প্রয়োজন হতো না। রেললাইন নির্মাণ সামগ্রীর রেট শিডিউল বাড়তো না এবং ৩৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচা হতো না। মূলত প্রকল্প প্রণয়নে অসচেতনতা এবং সময় বৃদ্ধির মাশুল ৩৭ কোটি টাকা। সঠিকভাবে প্রকল্প প্রণয়ন করলেই ২৯৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো।
পরিকল্পনার অভাবে আরও পাঁচ কিলোমিটার সিগন্যালিং ওয়ার্কের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড অ্যারাউন্ড সিগন্যাল কেবলের কাজ বৃদ্ধি, ৪৫০টি স্টিল রেলপথ জয়েন্ট, দুই হাজার চেক ব্লক, এক হাজার চেক বোল্ট, ১ হাজার ৩২০টি স্পেশাল বিয়ারিং প্লেট এবং ৫০ হাজার ঘন মিটার স্টোন ব্যালাস্ট সংগ্রহ করা হয়। ওয়েল্ডিং রেল জয়েন্টস, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং, ফিস প্লেট, ট্র্যাপ পয়েন্ট, স্পেশাল উডেন স্লিপারের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ইলাস্টিক রেল ক্লিপ, গ্রোভ রাবার প্যাড, গ্লাস ফিল্ড নাইলন লিনার, ফিস বোল্ট, পিসি স্লিপারের পরিমাণও বাড়ছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথমে ২০০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাকের জন্য ১৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন রেল, ৯০ সেট পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং ও ট্রাপ পয়েন্টের জন্য প্রয়োজন ৫১৮ মেট্রিক টন রেল এবং মেইনটেন্যান্স খাতে ২০০ মেট্রিক টন রেল প্রয়োজন। সব মিলিয়ে মোট রেল প্রয়োজন ১৪ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন। প্রতি টনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১০০ টাকা। এই খাতে মোট ১৯২ কোটি টাকা। মূল ডিপিপি থেকে সংশোধিত ডিপিপিতে ২০০ মেট্রিক টন রেল বাদ দেওয়া হয়েছে ফলে সাশ্রয় হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তারপরও সময় ও পরিকল্পনার অভাবে ৩৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব) মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ২০০ কিলোমিটার ছিলো ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো মেরামত করা হচ্ছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বর মাসেই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হবে। এই পথে আর ঝুঁকি থাকবে না, রেল কোচ পরিচালনায় গতি বাড়বে।
৩৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে আইএমইডি জবাব চেয়েছে আমরা উত্তর দিয়েছি। আসলে ঘরে বসে অনেক কিছুই চিন্তা করা হয় কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। তারা (আইএমইডি) ঘরে বসে চিন্তা করেছে আমরা মাঠে কাজ করছি। অনেক প্রকল্পতেই সময় ও ব্যয় বাড়ে তখন তারা (আইএমইডি) কী করবে?
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
এমআইএস/এমজেএফ