জীবিকার তাগিদে এই বৃদ্ধ বয়সেও চুল-দাড়ি কাটার কাজ করছেন তিনি। গরিব মানুষেরা কম টাকায় এসব কাজ করাতে আসেন তার কাছে।
শশী মোহনের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামে। সহায়-সম্বলহীন মানুষটি নরসুন্দরের পেশায় আছেন পাকিস্তান আমল থেকে। অনেক কষ্টে বাপ-দাদার পেশাটিকে আঁকড়ে ধরে আছেন এখনো।
তার তিন ছেলে, এক মেয়ে। সবার বিয়ে হয়ে গেছে। সন্তানেরা নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত, বৃদ্ধ বাবাকে দেখেন না।
শশী মোহন শীল বাংলানিউজকে বলেন, ‘জমি-জমা কিছুই নেই আমার। বৃদ্ধ বয়সে অন্য কোনো কাজও করতে পারি না। তাই কষ্টকর চুল-দাড়ি কাটার কাজ করে যাচ্ছি। রাস্তার পাশে ঝড়-বৃষ্টি মোকাবেলা করে কোনোমতে এ পেশাটিকে ধরে রেখেছি। কষ্ট হয়, সন্তানরাও দেখে না, পৌরসভা কর্তৃপক্ষও দেখে না’।
‘পৌরসভা যদি কোনো দোকান-ঘর করে দিতো, তাহলে এই বৃদ্ধ বয়সে কাজ করে শান্তি পেতাম’।
তিনি আরও বলেন, ‘গরিব মানুষেরা আমার এখানে এসে চুল-দাড়ি কামিয়ে নেন। চুল কাটতে ১০ টাকা আর দাড়ি কামাতে ৫ টাকা নেই। আর কেউ যদি চুল-দাড়ি একসঙ্গে কাটান, তবে ৩ টাকা কম নেই’।
‘বদরগঞ্জ উপজেলার সব নরসুন্দর আমাদেরই বংশধর’।
পাশে বসা অন্য নরসুন্দর কালিপদের (৬৬) বাড়ি উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে।
তিনি বলেন, ‘রোদ বৃষ্টি ঝড় মাথায় নিয়ে আমরা রাস্তার পাশে বসে চুল-দাড়ি কাটার কাজ করি। যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। আমরা মাত্র দু’দিন বদরগঞ্জের হাটবারে কাজ করতে পারি। বাকি দিনগুলো অন্যের বাড়িতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করি। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না’।
‘তবে আমাদের দিকে কেউ তাকানও না। পুঁজি থাকলে কি আমরা রাস্তার পাশে বসতাম?’
নরসুন্দর নির্মল বিশ্বাসের (৬৩) বাড়ি উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামে।
তিনি বলেন, ‘হতদরিদ্র গরিব লোকজনই আমাদের গ্রাহক। সারাদিন কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চলে’।
‘আমরা মানুষকে সুন্দর করি, কিন্তু আমাদের জীবন সুন্দর নয়। অনেক কষ্টে চলি, এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়!’
নরসুন্দর লাল মিয়া ((৬৫), মেনহাজুল হক (৪৫) ও সাজ্জাদ আলী (৩০) বলেন, ‘আমরা রাস্তার পাশে খুব কষ্টে কাজ করি। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যেন আমাদের জন্য কিছু একটা করে’।
বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র উত্তম সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত আছি। জমি পাওয়া মাত্র রাস্তার পাশে বসা ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের পুনর্বাসন করা হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
এএসআর