ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদেশি নাগরিকরা এ স্থলবন্দর দিয়ে ঢুকেই দেশের পরিবেশ আইনের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করছেন।
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর ভাঙায় নিয়োজিত নারী-পুরুষ শ্রমিকেরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা শহর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরগামী পুরো মহাসড়কের দুই পাশে উন্মুক্ত স্থানে অসংখ্য পাথর ক্রাশ মেশিন বসানো হয়েছে। পুরুষরা দৈনিক ৩০০ টাকা ও নারী শ্রমিকরা ১৮০ টাকা মজুরিতে সেগুলোতে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পাথর ভাঙার কাজ করছেন।
পুরো বুড়িমারী এলাকায় যত্র-তত্র গড়ে ওঠা এসব পাথর ক্রাশ মেশিনে শত শত শ্রমিক কাজ করছেন মাস্ক বা বিশেষ পোশাক ছাড়াই। ফলে তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সিলোকোসিস রোগে। পাথরের সিলিকন তাদের শরীরে প্রবেশ করে লিভার ও ফুসফুসে জমাট বেঁধে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এভাবে সিলোকোসিস রোগে আক্রান্তরা পরে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
২০০৭ সাল থেকে গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত সিলোকোসিস রোগে এ এলাকার ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা ঠাকুরপাড়া এলাকার শ্রমিক দুলাল হোসেন (৩৫) মারা যান। মৃত্যুর প্রহর গুণছেন রোগাক্রান্ত আরও অনেকেই।
ধুলোর কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, ওই এলাকায় কর্মরত সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পথচারীরা পড়ছেন বিপাকে। এরই মধ্যে এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই।
বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার বাংলানিউজকে বলে, সানগ্লাস-মাস্ক ছাড়া বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়াই শুধু নয়, ক্লাস করাও কষ্টকর। বাসায় ফিরেই পোশাক ধুতে হয়। তবুও সর্দি-কাশি লেগেই থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, শুধু ধুলোর কারণেই ওই এলাকায় দায়িত্ব পালনে কেউ যেতে চান না।
সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত ভিক্টোরিয়া মোজাইক ফ্যাক্টরির পাথর ভাঙা শ্রমিক আজানুর রহমান (৩০), আইয়ুব আলী (২৮) জানান, প্রথমে শ্বাসকষ্ট হয় তাদের। পরে পরীক্ষা করে জানতে পারেন, সিলিকোসিস হয়েছে। বহুদিন ধরে চিকিৎসা নিলেও কার্যত কোনো উন্নতি হচ্ছে না। দিন দিন এ রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়ছেই।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উদ্যোগে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির সহযোগিতায় গত ০৬ নভেম্বর বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত এসব শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পরামর্শ দান ও বিনামূল্যে ওষুধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
ওই অনুষ্ঠানেও জানানো হয়েছে, ধুলো না উড়তে পর্যাপ্ত পানি ব্যবহারে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করছে না কোনো প্রতিষ্ঠানই। ফলে বুড়িমারী জনপদের প্রত্যেকেই মানুষ সিলোকোসিসের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকিতে রয়েছেন।
স্থলবন্দরের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে এসব পাথর ক্রাশ মেশিন সরিয়ে জনবসতিহীন এলাকায় নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষেরা।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ নিশাত বাংলানিউজকে জানান, ধুলো না উড়তে প্রতিটি পাথর ক্রাশ মেশিনে ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত পানি ঢালার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকেই তা মানছেন না।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর কুতুবুল আলম বলেন, যেসব মেশিনে পানি না ছিটিয়ে পাথর ভাঙা হচ্ছে বা শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
জনবসতিহীন স্থানে এসব মেশিন সরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
আরএ