তবে মানুষের শখকে পুঁজি করে পাখি বিপননের আড়ালে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। কম দামে পাখি বিক্রির কথা বলে প্রথমে বিকাশের মাধ্যমে আদায় করা হয় অগ্রীম টাকা।
টাকা না দিলে বিভিন্ন হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি মেয়ে ক্রেতাদের ফেসবুক থেকে ছবি নিয়ে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন পর্নো সাইটে। পুরুষ ক্রেতাদেরও ফেসবুক আইডি থেকে তাদের প্রিয়জন নারী সদস্যের ছবি বিভিন্ন আপত্তিকর সাইটে ফোন নাম্বারসহ ছড়িয়ে দেয় চক্রটি। এরপর থেকে হাজারবো ফোন কলের বিড়ম্বনা এবং সামাজিকভাবে হেয় হতে থাকেন সেসব নারীরা।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর শেওড়াপাড়া থেকে কমল বিশ্বাস (৩৫) নামে এক প্রতারককে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যের প্রমান পায় পিবিআই।
প্রতারণার শিকার হওয়া জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী নামে এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, তার স্ত্রী একজন সৌখিন পাখি পালক। কয়েকমাস আগে তার স্ত্রী ফেসবুকের একটি পোস্টে তিনজোড়া বিদেশি পাখি ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেখে কিনতে আগ্রহী হন। তখন তিনি সেখানে উল্লেখিত একটি ফোন নাম্বারে ফোন করলে সেই ব্যক্তি বিকাশে অ্যাডভান্স টাকা পাঠাতে বলেন। তখন তার স্ত্রী ৩ হাজার টাকা অ্যাডভান্স দিলে সেই বিক্রেতা জানায় বাজিতপুর থেকে বাসে পাখি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাখি না পাঠিয়ে সে কয়েকদিন ঘুরানোর পর বিকাশে আরও টাকা পাঠাতে বলে।
তিনি বলেন, বিষয়টি আমার সন্দেহ হলে আমি পাখি ছাড়া আর টাকা দিতে অস্বীকার করি। তখন থেকে আমার স্ত্রী ও আমার নাম্বারে ফোন দিয়ে জঘন্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রীর ছবি ও ফোন নাম্বার অন্য নাম ব্যবহার করে ৮-১০টা পর্নো সাইটে দিয়ে দেয়। এরপর কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার ফোন আসতে থাকে আমার স্ত্রীর নাম্বারে। পরে বাধ্য হয়ে শাহবাগ থানায় একটা জিডি করি এবং পুলিশের পরামর্শে আমার ও আমার স্ত্রীর ফোন নাম্বার বন্ধ রাখি।
অনলাইনে পাখি ব্যবসায়ী হাসান রাজ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতারকরা পাখির মূল দামের অর্ধেক বা তারও কম দামে বিক্রির জন্য সাধারণত ফেসবুক ও বিক্রয় ডটকমে পোস্ট দেয়। তারা ঠিকানা সাধারণত ঢাকার বাইরে ব্যবহার করেন যেন গ্রাহক সেখানে যেতে না পারে এবং বিকাশে টাকা দিতে বাধ্য হন। প্রাথমিকভাবে টাকা নেওয়ার পর পাখি না দিয়ে আরও টাকা আদায়ের জন্য ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে সেই প্রতারক চক্র।
এ বিষয়ে পিবিআই'র বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) আহসান হাবীব পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, কমল নামে এক প্রতারককে দু’টি ল্যাপটপ এবং চারটি মোবাইল ফোনসহ আটক করা হয়েছে। তার সঙ্গে অন্যান্য জড়িতদেরও শিগগিরিই গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।
তবে এমন প্রতারণা থেকে বাঁচতে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
পিএম/জিপি/এসআইএস