জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে জানান, নকশা সংগ্রহে রয়েছে। এখন সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই কাজ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত ৮ হাজার নকশার মধ্যে ৮৩৫টি নকশা সরাসরি সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ওই ৮৩৫টি নকশা ছাড়াও ৫৬টি ডকুমেন্ট আনা হয়েছে। প্রতিটি নকশার সংগ্রহে খরচ হয় ১৯ ডলার অর্থাৎ ১ হাজার ৫৮৭ টাকা ৭৩ পয়সা।
সংসদ ভবনের নকশা সংগ্রহের বিষয়টি অনুধাবন করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি লুই আই কানের মূল নকশা সংগ্রহের নির্দেশ দেন সংসদ সচিবালয়কে। ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর একনেক বৈঠকেও লুই আই কানের মূল নকশা আনার নির্দেশনা দেন তিনি। কেননা মূল নকশা হাতে না থাকায় সচিবালয় সেগুনবাগিচা থেকে আগারগাঁওয়ে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছে না সরকার।
নকশা হাতে পাওয়ার পর সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছিলেন, লুই আই কান প্রণীত সংসদ ভবনের নকশা, পুরো এলাকার মহাপরিকল্পনাসহ অন্যান্য অংশের স্থাপত্য নকশা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নকশা সংগ্রহের পর সংসদ সচিবালয়ের সিদ্ধান্ত ছিল সবগুলো নকশা বাছাই করে চারটি সেট আলাদা করে চার প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকবে। এরমধ্যে এক সেট সংসদ সচিবালয়ে সংরক্ষিত থাকবে। একটা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যাবে আর এক সেট জাতীয় আর্কাইভে রাখা হবে। আরেক সেট সংসদের আর্কাইভে থাকবে। তবে সবকিছু হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নকশাগুলো দেখানোর পর।
নকশা দেখাতে প্রস্তুত সংসদ সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর সময় পেলেই নকশাগুলো দেখানো হবে। তবে নকশা অনুযায়ী জিয়াসহ অন্যান্যদের কবর সরবে কি না তা একমাত্র সরকারি সিদ্ধান্তর ওপর নির্ভর করছে। রাজনৈতিক হিসেবনিকেশে এটুকু অনুমেয় যে, সরকার এখন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যাতে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ায়। একাদশ নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম হওয়ার পক্ষে নেই সরকার।
কী ছিলো লুই আই কানের নকশায়:
১৯৭৪ সালে লুই আই কান যখন মূল নকশাটি করেন তখন ২৭টি মন্ত্রণালয়ের অফিস ভবন করার কথা ছিল আগাওগাঁও এলাকায়। তখন সেখানে মসজিদ ও মাঝখানে বাগান ছিল। চন্দ্রিমা উদ্যানে একটি বড় সড়ক ছিল, এর সামনে লেক ছিল এরপর সংসদ ভবন।
১৯৭৪ সালে শেরেবাংলা নগরে ৪২ একর জায়গায় জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের জন্য সরকার ও মার্কিন কোম্পানি ডেভিড উইসডম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে চুক্তি হয়। পরে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই এলাকায় এরই মধ্যে ১০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। জমি কমে যাওয়া এবং বর্তমানের চাহিদা বিবেচনায় লুই আই কানের নকশা কিছুটা সংশোধন করেছে স্থাপত্য অধিদফতর।
নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সংসদ ভবন এলাকার ভেতরেই গড়ে তোলা হয় জিয়াউর রহমানের মাজার ও কবরস্থান। এর মধ্যে সংসদ ভবনের উত্তরে ৭৪ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত চন্দ্রিমা উদ্যানের মাঝখানে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয় জিয়ার মাজার কমপ্লেক্স। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামল মিলিয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্ত লাগোয়া স্থানে পাঁচ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে ‘জাতীয় কবরস্থান’ নাম দিয়ে আরো অন্তত সাতজনকে সমাধিস্থ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লুই আই কানের মূল নকশার প্রথম ধাপ ছিল ২০৮ একর জায়গার উপর জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ। যার সামনে ও পেছনে বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠ থাকবে। চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানে লেক। দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর থাকবে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। বাকি জায়গায় গড়ে তোলা হবে সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক বলয়।
১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এ ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এ প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘ সাধনার পর ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি সংসদ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এসএম/এমজেএফ