‘জবাই করে হত্যার পর জিদানের মরদেহ কোলে নিয়ে শ্রেণিকক্ষ থেকে বাইরে বের হয়ে বাথরুম-গোসলখানার সেফটি ট্যাংকিতে ফেলে দেয়। এরপর মাদ্রাসার বাউন্ডারি দেয়ালের কাঠের বেড়া ভেঙ্গে পালিয়ে যায় ঘাতক আবু বক্কর’।
সোমবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পল্টন থানার গুলিস্তানের মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী জিদান হত্যার বিষয়ে এসব তথ্য জানায়। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যপট বাংলানিউজকে বর্ণনার সময় শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।
মাদ্রাসাটির ওই শ্রেণিকক্ষেই মাদুর ও বিছানা পেতে রাতে ঘুমায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু রোববার (১৯ নভেম্বর) গভীর রাতের ওই ঘটনার পর ওই কক্ষের কেউ আর ঘুমাতে পারেনি। তাই অনেক শিক্ষার্থীকেই দুপুর পর্যন্ত ঘুমাতে দেখা গেছে।
সোমবার ভোরে ওই মাদ্রাসার সেফটি ট্যাঙ্কের ম্যানহোল থেকে শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান জিদানের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত জিদান মাদ্রাসাটির হেফজ শাখার ছাত্র এবং ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার হাফিজ উদ্দিনের ছেলে।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার চার শিক্ষার্থীকে পল্টন থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তারা হচ্ছে- হেফজের শিক্ষার্থী মো. রাফিউল, মো. হাবিবুল্লাহ, মো. রিয়াজ ও হাফেজ পাস ওমর ফারুক। কয়েকজন শিক্ষককেও থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আবু বক্কর ও জিদানের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিলো। শিক্ষকরা সেটার মীমাংসা করে দেন। কিন্তু মীমাংসায় আবু বক্কর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরেই ঘুমন্ত জিদানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায় বলে ধারণা করছি’।
‘আমরা পলাতক ছাত্র আবু বক্করকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি’।
মাদ্রাসাটিতে সরেজমিনে গেলে শিক্ষার্থীরা আরও বলে, রাত দেড়টার দিকে শ্রেণিকক্ষের ভেতর থেকে ধস্তাধস্তি ও খাবারের প্লেট নড়াচড়ার শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙ্গে। এরপর গেট খোলার শব্দ পাই। উঠে আলো জ্বালিয়ে দেখি, বিছানা, মশারিসহ মেঝেতে অনেক রক্ত। এসব দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই’।
শিক্ষার্থী মো. ওসমান বাংলানিউজকে বলে, ‘রাত দশটার মধ্যে ঘুমানোর কথা থাকলেও গল্প-গুজব করে প্রায় দিনই আমরা রাত ১১টার পর ঘুমাই। গতকাল (রোববার) রাতে আবু বক্কর তার বিছানায় খুব তাড়াতাড়ি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। সে সবাইকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতেও বলে। কয়েকজন গল্প-গুজব করতে থাকলে তাদেরকে বকাও দেয় আবু বক্কর। পরে পাশের শিক্ষার্থী মো. শফিকুলের কাছ থেকে হাতঘড়ি চেয়ে নেয় সে’।
শিক্ষার্থীরা আরও বলে, ‘জিদান ও আবু বক্কর দুজনই খুব ভালো বন্ধু ছিলো। তবে গত কোরবানির ঈদের পর থেকে ওদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। তবে কি নিয়ে তা আমরা জানি না। তখন থেকে আবু বক্কর প্রায়ই জিদানকে মারধর করতো। জিদানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমাদেরকেও মারধর করতো’।
‘প্রায় সময়ই বক্কর আমাদেরকে বলতো- আমি একটা ছুরি কিনুম, জিদানকে খুন করমু। আমরা মনে করেছি- দুষ্টামি করে এসব বলছে’।
শিক্ষার্থী আশরাফুল বলে, ‘মাসখানেক আগে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। ওর পাশে শোয়ার সময় হঠাৎ আমার গায়ে খোঁচা লাগে। পরে দেখি, আবু বক্করের কাছে একটি ছুরি। তার কাছ থেকে ছুরিটি নিয়ে আমাদের ট্রাংকে লুকিয়ে রাখি। পরে মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়াসিনের কাছে বিষয়টি জানাই। ওই ছুরিটি তার কাছে জমা দেই’।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, আবু বক্কর এক বছর আগে হাফেজ হয়েছে। শিক্ষকদের আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০ পারা কোরআন পড়ে শোনানোর পর মাদ্রাসা ছাড়ার কথা ছিল তার। ১৬ বছরের আবু বক্কর মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষার্থী হওয়ায় অন্য শিক্ষার্থীদের নেতা ছিল। সবাইকে তার কথা শুনতে বাধ্য করতো সে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এসজেএ/ এএসআর
** সহপাঠীর হাতে খুন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী
** রাজধানীতে মাদ্রাসা ছাত্রের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার