ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঠিকাদার-পরামর্শকের বিল পরিশোধে বাড়ছে মেয়াদ!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
ঠিকাদার-পরামর্শকের বিল পরিশোধে বাড়ছে মেয়াদ! নবনির্মিত রেল লাইন। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: টঙ্গী থেকে ভৈরববাজার পর্যন্ত  ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ শেষে উদ্বোধন হয়ে গেছে এক বছর ৯ মাস আগেই। ‘সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে ডাবললাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে গত জুনে।

তবে বকেয়া রয়ে গেছে ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিল।  

এখন ওই বকেয়া পরিশোধে তৃতীয় দফায় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ছে প্রকল্পটির।

তবে ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রেলপথ মন্ত্রণালয়।

গত বছরের  ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২ হাজার ২১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেললাইনের উদ্বোধন করেন।  

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৭২৪ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলনে ২০০৬ সালে অনুমোদিত প্রকল্পটির কাজ ২০১১ সালের জুন মেয়াদে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নানা কারণে কাজই শুরু হয় ২০১১ সালের ০২ নভেম্বর 

ফলে দু’দফায় ৩ বছর করে ৬ বছর মেয়াদ ও মোট ১ হাজার ৪৮৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে রেলপথটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়।  

এর মধ্যে প্রথম সংশোধনে ব্যয় বেড়ে ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা ও মেয়াদ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় সংশোধনে ব্যয় বেড়ে ২ হাজার ২১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা ও মেয়াদ বেড়ে দাঁড়ায় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত।  

রেলওয়ের অতিরিক্ত  প্রধান প্রকৌশলী  নাজনীন আরা কেয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু পরামর্শক খাত ও ঠিকাদারি খাতে এখনও বিল বকেয়া রয়ে গেছে। ওই অর্থ পরিশোধে মেয়াদ বাড়াতে হবে। কারণ, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা না বাড়ালে টাকা ছাড় হবে না।  
 
৭২৪ কোটি টাকার রেলপথ নির্মাণের ব্যয় ২ হাজার ২১২ কোটি টাকা হওয়া  প্রসঙ্গে প্রকৌশলী  কেয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না’।

তবে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালে দেশে হরতাল-অবরোধ ছিলো। বর্ষাও চলে আসায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছে। ফলে রেট সিডিউল ও প্রকল্পের পরামর্শক খাতের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়।  
 
এর মধ্যেও আবার প্রথম সংশোধনী অনুসারে চুক্তির শর্তের প্রেক্ষিতে পরামর্শক সেবা বাবদ প্রায় ৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং সিডি ভ্যাট বাবদ ২ কোটি টাকা বকেয়া রয়ে গেছে।
 
অন্যদিকে দ্বিতীয় সংশোধনী অনুসারে পরামর্শক সেবা বাবদ ৬৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকার ব্যয় সংস্থান ছিলো। কিন্তু বাস্তবে ব্যয় হয়েছে ৬৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।  ফলে এ খাতে অতিরিক্ত ব্যয় হওয়া ৭৮ লাখ ১৪ হাজার টাকাও পরিশোধ করতে হবে।  

প্রকল্পটির আওতায় ৮৬ কিলোমিটার ট্রাক (৬৪ কিমি মেইন এবং ২২ কিমি লুপ ও সাইড লাইন), ৭১টি সেতু, ১১টি স্টেশন ভবন, ২টি সিগন্যালিং ইক্যুইমেন্ট ভবন এবং ১৩টি স্টেশনে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলকিং সিগন্যালিং স্থাপন হয়েছে।
 
ফলে ডাবল লাইনে উন্নীতকরণের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-ভৈরব-ময়মনসিংহ- এ তিনটি করিডোরের লাইন ক্যাপাসিটি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আগের লাইন ক্যাপাসিটিতে বর্তমানে এ সেকশনে ২২টি আন্তঃনগর, ১৮টি মেইল এক্সপ্রেস ও ৬টি কন্টেইনার ট্রেনসহ ৪৬টি ট্রেন চলাচল করছে। ট্রেনের সংকট মিটিয়ে সম্পূর্ণ ক্যাপাসিটি কাজে লাগানো গেলে চলবে ৮৪টি ট্রেন।  

এদিকে ডাবল লাইনের কারণে এ রুটে ট্রেনের গতি বেড়ে যাত্রার সময় কমে গেছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে সুবর্ণ এক্সপ্রেসহ বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের আগে গড়ে ৬ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন ১০০-১২০ কিমি বেগে চলে প্রায় ২ ঘণ্টা কমে সময় লাগছে ৪ ঘণ্টা ২০ মিনিট।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।