তাই বড়শি পেতে মাছ ধরার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন তারা। সঙ্গী বানিয়ে নেন গোলাম মোস্তফা, মাসুদ রানা, তায়েজ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, আমীর হামজা বাবলু, শাহিন আকতারকে।
সবাই চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে বড়শিও কিনে ফেলেন। ছিপ বড়শির মতই। তবে তা হুইল বড়শি নামে পরিচিত। কিন্তু বড়শি পেতে মাছ ধরবেন কোথায়? কারণ সবাই বগুড়ার শেরপুর উপজেলা শহরে বসবাস করেন। যে শহরে কোনো খাল নেই। বিলও নেই। না আছে তেমন বড় পুকুর।
তাই বলে বসে থাকলে তো আর মাছ ধরা হবে না। দিনক্ষণ ঠিক করে বড়শি হাতে মোটরসাইকেল যোগে দল বেঁধে তারা ছুটে চলেন বিভিন্ন জলাশয়ে। কোনো দিন ছুটে যান বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বহমান যমুনা নদীতে, আবার চলে যান ধুনট উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত যমুনায়। কখনো সারিয়াকান্দি বা শেরপুর উপজেলায় বহমান বাঙালি ও করতোয়া নদীতে মাছ ধরতে যান তারা। রাজশাহীর দূর্গাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্ধু-বান্ধবের বড় বড় পুকুরে মাছ শিকার করে বেড়ান এসব যুবক ব্যবসায়ী।
সর্বশেষ তারা বড়শি পেতে মাছ ধরতে যান বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বহমান বাঙালি নদীর বেলগাছী এলাকায়।
নদীর কূল ঘেঁষে মাদুর বিছিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে হুইল বড়শি নিয়ে বসে পড়েন সবাই। পাশেই পোঁতা বেশ বড় আকারের দু’টো ছাতা। সঙ্গে হালকা খাবারের ব্যবস্থাও ছিলো তাদের। ছিলো নেটের তৈরি মাছ রাখার ঝুড়ি। সৌখিন এসব মাছ শিকারির সঙ্গে বড় বড় ছিপ বড়শি নিয়ে যুক্ত হন স্থানীয়রা।
বড়শি ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন মাছের অপেক্ষায়। কখন মাছ টোপ গিলবে। সুতো ধরে টানা দেবে। এরপর শুরু হবে শিকারির মাছ ধরার কারিশমা। কখন হুইলের সতো ছাড়তে হবে আবার কখন টানতে হবে, এভাবে মাছ ওপরে না ওঠা পর্যন্ত যেন সাপ-লুডোর খেলা চলতে থাকে।
বড়শিতে আটকে যাওয়া মাছটি পানিতে দৌঁড়াদৌঁড়ির পর একটি সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন মাছটিকে শিকারি ডাঙায় উঠিয়ে আনেন। মূলত মজাটা তখনই। হৈ-হুল্লোড় করে চলে আনন্দ আর উল্লাস।
শাহিনুর ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বড়শি ফেলে মাছ ধরা তাদের পেশা নয়, এটা অলস সময় কাটানোর পাশাপাশি অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছে। প্রায় দু’মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বড়শি ফেলে মাছ ধরছেন তারা। এরমধ্যেই কাতল, রুই, মৃগেল, হাঙড়ি, আইড়, তেলাপিয়া, ইটা, গজার, পাবদা মাছ শিকার করতে পেরেছেন। সর্বোচ্চ ৬ কেজি ওজনের মাছ শিকার করেছেন।
নাজির আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, মাছ শিকারে বড়শির পাশাপাশি টোপ বা আধারের প্রয়োজন। টোপ তৈরিতে বুচকিদানা, তাম্বর, আওফল, ক্যাকটাস, মাখনের গাদ, স্টার ফল, মিষ্টির গাদ, গমের ভূষি, গাওয়া ঘি, জায়ফল, জয়ত্রী, পাউরুটিসহ আনুসঙ্গিক জিনিসপত্রের ব্যবহার করতে হয়। এসব পরিমাণ মতো একত্রে মিশিয়ে বড় বাসনে রেখে ঢাকনা বন্ধ করে রোদে শুকিয়ে মাছ ধরার টোপ বা আধার বা চার বানানো হয়।
তবে বগুড়া শহরের কিছু দোকানে মাছ ধরার টোপ রেডিমেড কিনতেও পাওয়া যায়। এসব দোকানে বিভিন্ন ধরনের হুইল বড়শিও পাওয়া যায়। কিন্তু মাছ শিকার করা তাদের পেশা না। অলস সময় কাটানো একটা সৌখিন নেশা। তাই শুরুতে টোপ বানালেও এখন তারা রেডিমেড টোপ কিনে নিয়ে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম