যাবেন কি-না- তা না জানিয়ে চালক বলে উঠলেন, ‘ভাড়া সাড়ে তিনশ’ টাকা’। ভাড়া কমানোর কথা শুনে ভাবটা এমন করলেন- ‘গেলে যান, না গেলে নেই’।
কয়েকদিন আগেও ঢাকার রাস্তায় যাত্রী ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মধ্যেকার পরিচিত দৃশ্য ছিল এটি। সুযোগ বুঝে আকাশছোঁয়া ভাড়া দাবি আর যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ছিলো অটোরিকশা চালকদের সাধারণ অভ্যাস।
যানজট ও ভোগান্তির এই নগরীতে যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশার চালকদের হাতে অনেকটা জিম্মি হয়েই ছিলেন।
সম্প্রতি রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। সিএনজি অটোরিকশা চালকদের এমন স্বেচ্ছাচারী আচরণ থেকে পরিত্রাণ দিচ্ছে নগরীতে চালু হওয়া অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন সেবা।
ঢাকায় প্রথম অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু করে শেয়ার এ মোটরসাইকেল (স্যাম)। এরপর উবার, পাঠাও, চলো, আমার বাইক, আমার রাইড, ময়ুর, ওয়েজসহ বিভিন্ন অ্যাপস্ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের সেবা নিয়ে হাজির রয়েছে।
এরই মধ্যে যাতায়াতে এ পরিবহনগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মানুষের কাছে। সিএনজি অটোরিকশার ‘জিম্মিদশা’ থেকে মুক্তির মাধ্যম ‘অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন সেবা’ বলেই জানাচ্ছেন যাত্রীরা।
‘বিপদের সময় অটোরিকশা চালকরা কসাইয়ের ভূমিকা নিতেন’ অভিযোগ করে মিরপুর-১৪ নম্বরের বাসিন্দা নাছরিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশার কোনো দরকারই নেই। এগুলো একেবারে উঠে গেলে খুশি হই। চালকদের সহানুভূতি দেখানোর মতো কোনো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। চলাচলে পদে পদে বিপদ। জরুরি সময়ে কসাইয়ের মতো ভাড়া নিতেন চালকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু হওয়ায় সিএনজি অটোরিকশার ট্রিপ কমে গেছে, চালকেরা পড়েছেন বিপাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টার যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেক চালক রিকশা চালকদের মতোই ডেকে ডেকে যাত্রী নিচ্ছেন। দীর্ঘদিনের ভোগান্তিতে ক্ষিপ্ত স্মার্টফোন ব্যবহারকারী যাত্রীরাও চালকদেরকে পাঠাও-উবারের ভয় দেখাচ্ছেন।
যাত্রীরা বলছেন, অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন চালকদের পরিচয় নিবন্ধিত হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত থাকা যাচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশা চালকরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটাতেন। রাইড শেয়ারিংয়ে শিক্ষিতরা জড়িত থাকায় যাত্রী হয়রানিও কমবে।
সিএনজি অটোরিকশায় নিজের ভোগান্তির ঘটনা তুলে ধরে যাত্রী আশরাফুল আলম বলেন, ‘একবার আমি সৈয়দপুর থেকে মাকে নিয়ে ঢাকায় আসি। ভোর ৫টায় গাবতলীতে নেমে মোহাম্মদপুর যেতে অটোরিকশা ঠিক করছি। সবার ভাড়া আকাশচুম্বী। এক চালক ভাড়া কমিয়েই যেতে রাজি হলেন। ভোরের সুনসান রাস্তা। কল্যাণপুর পার হলে, চাকু-ছুরি বের করে সব হাতিয়ে নিয়েছেন ওই চালক। সেই থেকে সিএনজি অটোরিকশায় আমার ভয়’।
‘আমি এখনও অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন ব্যবহার করিনি। তবে শুনেছি, শুনে ভালো লেগেছে’।
অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন সেবার অভিজ্ঞতা জানিয়ে আব্দুল বারী বলেন, ‘উবারে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাবতলীতে গেলাম, ১৮০ টাকা লাগল। শব্দহীন ও ঝাঁকিমুক্ত জার্নি। সিএনজি অটোরিকশা অনিরাপদ ও ঝামেলার, ভাড়াও বেশি চান চালকেরা। মিটারে যাবে না, ভাড়া বাড়ায় দেন- কতো দাবি! এখানে ভাড়া নিয়ে বারগেনিংয়ের কোনো সুযোগ নেই, প্রয়োজনও নেই। তবে পাঠাও-স্যামে ভাড়া সাধ্যের মধ্যে হলেও উবারে একটু বেশি। উবারের ভাড়া একটু কমলে আরও জনপ্রিয় হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এমসি/এএসআর
** ‘কামাই নাই, খ্যাপ কইম্যা গেছে’