বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বাংলানিউজে ‘অর্থাভাবে কি ঢাবিতে ভর্তি হতে পারবেন না রাজু?’ এই শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি ডিসির দৃষ্টিগোচর হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলানিউজকে জানানো হয়, অদম্য মেধাবী রাজুর ভর্তির দায়িত্ব নেবেন খুলনা জেলা প্রশাসক।
এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক ব্যক্তি ভর্তির জন্য ১০,২০০ টাকা রাজুর বিকাশ নম্বরে পাঠিয়েছেন।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাজুর হাতে ভর্তির জন্য নগদ ১৫ হাজার টাকা ও উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী তুলে দেন আমিন-উল-আহসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মনিরুজ্জামান, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন এবং এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
আমিন উল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, ইজাজুল ইসলাম রাজু সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি বাংলানিউজে হঠাৎ নজরে পড়ে ‘অর্থাভাবে কি ঢাবিতে ভর্তি হতে পারবেন না রাজু?’ পরে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায় রাজু খুব গরীব ঘরের সন্তান। বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী।
যশোরের কেশবপুরের সন্তান, কিন্তু থাকে খুলনার মৌলভীপাড়ার একটি মেসে। রাজুকে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয় এবং সে এসে সংগ্রাম গাঁথা জীবন কাহিনী শোনায়। কিভাবে সে পড়াশোনার জন্য অর্থ যুগিয়েছে। কতটা কষ্ট করে শ্রমের বিনিময়ে পরিশোধের শর্তে টাকা ধার করে সে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকাতে যায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে বাংলা বিষয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে।
সব শুনে রাজুর অদম্য চলার পথে সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসক হাত বাড়িয়ে দেন। রাজু ভর্তি হওয়ার সব ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন। ভর্তির অর্থসহ রাজুর হাতে তুলে দেওয়া হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’।
ডিসি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নিশ্চয় রাজুর হাত ধরে একদিন মাতৃভাষা বাংলার সঠিকচর্চা হবে। রচিত হবে আরকটি চর্যাপদ কিংবা গীতাঞ্জলী। রাজু একদিন হবে আলো হাতে আঁধারের যাত্রী।
এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে রাজু বাংলানিউজকে বলেন, অর্থাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ এবং স্বপ্ন দুই-ই হাতছাড়া হতে বসেছিলো। ডিসি স্যার আমার ভর্তির দায়িত্ব নিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। তার সহযোগিতায় আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এ জন্য আমি তার কাছে চির কৃতজ্ঞ। এছাড়া নাম প্রকাশ না করে ঢাকার যে ব্যক্তি আমাকে ১০,২০০ টাকা পাঠিয়েছেন আমি তার প্রতি আসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ সহযোগিতা না পেলে হয়তো আমার পড়ালেখা এখানেই থেকে যেতো।
রাজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মেধাক্রম ১৪৩৯। খ ইউনিটে মোট আসন সংখ্যা ২৩৬৩। হত দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই ছেলেটি এবার ভর্তি পরীক্ষার মেধাক্রম অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তির জন্য তার প্রয়োজন ছিলো ১৩/১৪ হাজার টাকা। রাজুর পরিবারের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না।
রাজু খুলনা মহানগরীর মৌলভীপাড়ার দোলখোলা রোডে ম্যাচে থেকে একটি ব্যাচে পড়ে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তার বাবা যশোর জেলার কেশবপুর থানার দোরমুটিয়া গ্রামের হেরমত আলী একজন ভূমিহীন কৃষক।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এমআরএম/এসএইচ