বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে রাজবাড়ী বাজারের ডিউক এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দোকানের সামনে থেকে তাকে আটক করে স্থানীয়রা। সোহান রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর এলাকার নুরু’র ছেলে।
ডিউক এন্টারপ্রাইজের মালিক রইচ উদ্দিন ডিউক বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে আমার মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে নিজের নাম ঠিকানা গোপন রেখে এক ব্যক্তি দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। এ টাকা না দিলে ওই ব্যক্তি আমাকে হত্যার হুমকিও দেয়। শাখাওয়াত হোসেন সোহান আমার পূর্ব পরিচিত এবং তাকে আমি ভাগ্নে বলে সম্বোধন করি।
সোহান আমাকে আগেই জানিয়েছিলেন সে পুলিশের এএসআই পদে চাকরি করে। সে তার নিজ নামে বাংলাদেশ পুলিশের 'এএসআই’ এর একটি ভিজিডিং কার্ডও দেখান। যে কারণে আমি সোহানকে চাঁদা দাবির ঘটনা খুলে বলি। ঘটনা শুনে সোহান আমাকে বলে মামা সমস্যা নেই আমি বিষয়টি দেখছি। এর দু’একদিন পর সোহান আমাকে বলে, মামা আমি বিষয়টি কন্ট্রোল রুমে জানিয়েছি। রাজবাড়ী থানার একজন এএসআইকে বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাকে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। এরপর আমি সোহানকে দুই হাজার টাকা দেই।
তিনি আরও বলেন, সোমবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সোহান আমার দোকানে এসে বলে, মামা আপনার ম্যানেজারের মোটরসাইকেলে যে হেলমেটটি রয়েছে সেটি নিয়ে একটু ফাঁকে আসেন, ওই হেলমেটের মধ্যে হেরোইন আছে। আমাদের চারপাশে সিভিল পুলিশ আছে, এখানে খুললে ঝামেলা হবে। আমি তার কথামতো হেলমেটটি একটু আড়ালে নিয়ে দেখি তার মধ্যে সত্যিই হেরোইন রয়েছে। এরপর সোহান আমাকে বলে, দেখেছেন মামা ওইখানে হেলমেটটি তশ্লাশি করলে পুলিশ আপনার ম্যানেজারকে গ্রেফতার করতো। এতে আমার সন্দেহ হলে আমি সোহানকে না জানিয়ে আমার দোকানের সামনে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে দেখি ওইদিন সকালে সোহান ওই হেলমেটটি নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। এতে আমার সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। পরে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সোহান ভুয়া এএসআই। এরপর আমি নিশ্চিত হই সোহানই আমার কাছে ম্যাসেজের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করতো। এ ঘটনার পর বুধবার সকালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমি দোকানের সামনে থেকে সোহানকে আটক করে থানায় খবর দিলে পুলিশ সোহানকে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন ডিউক বাদী হয়ে মামলা করবেন বলেও বাংলানিউজকে জানান।
স্থানীয়রা জানায়, সোহানের বাড়ির এলাকায় রয়েছে রাজবাড়ী সদর পুলিশ ফাঁড়ি। সে কারণে ওই ফাঁড়ির কিছু পুলিশের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। মাঝে মধ্যে সোহানকে ওই ফাঁড়ির পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেল চালকদের কাগজপত্র চেকিং করতে দেখা যেত এবং যেসব মোটরসাইকেলের কাগজপত্র নেই তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে মোটরসাইকেলগুলো ছেড়ে দিতেন। সোহান নিজেই বিভিন্ন মোটরসাইকেল সংকেত দিয়ে থামাতেন এবং পুলিশ চেকিং করতেন। এছাড়াও তিনি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিক কামাল বাংলানিউজকে জানান, অভিযুক্ত সোহান পুলিশে চাকরি করে না। তারপরও তার কাছ থেকে নিজ নামীয় পুলিশের ভিজিডিং কাড পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সে পুলিশ পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করতো। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ২২ নভেম্বর, ২০১৭
আরএ