বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্রাব) সংবাদ সম্মেলন করে স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগ করে হাসিনা বেগম জানান, তিনি ১২ বছর ধরে ঢাকা কাস্টমস হাউসে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের ব্যবসা করছেন।
তিনি আরও জানান, বিয়ের পরে জানতে পারেন শহীদের আরও তিনজন স্ত্রী আছে। তাদের বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া করে রাখেন তিনি। তবে অন্য তিন স্ত্রীর যথাযথ ভরণপোষণ করলেও তাকে ঠিকমতো দেখভাল করেন না শহীদ খান।
২০০৮ সালে নিকুঞ্জতে সাত তলা বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন রাজস্ব কর্মকর্তা শহীদ খান। বাড়ির কাজ শেষ হয় ২০১০ সালে। বাড়িটি নির্মাণ করার সময় হাসিনার নামে অর্ধেক বাড়ি লিখে দেবেন বলে তার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ধার নেন। পরবর্তীতে বাড়ি তৈরি শেষে প্রথম স্ত্রী মমতাজ ও নিজের নামে বাড়ি লিখে নেন বলে জানান হাসিনা বেগম।
প্রতারণা করে ও প্রলোভন দেখিয়ে এভাবে একাধিক নারীকে শহীদ খান বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ করেন হাসিনা। তাকে বিয়ে করার পর আরও এক নারীকে বিয়ে করেছেন বলেও জানান তিনি।
শহীদ খানের পঞ্চম স্ত্রী রুমিয়া আক্তার চলতি বছরের ১৫ তাকে ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন হাসিনা। হুমকির বিষয়ে খিলগাঁও থানায় জিডি করেছেন বলেও জানান তিনি।
গত ১৮ জুন জরুরি আলাপ আছে জানিয়ে হাসিনার বাসায় আসেন শহীদ খান। তখন মোহাম্মদপুরের জমিতে বাড়ির কাজ করার কথা বলে ১০ লাখ টাকা যৌতুক চান। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ করেন হাসিনা বেগম।
চলতি বছরের ২৯ জুন এনবিআর চেয়ারম্যান ববাবর নারী নির্যাতন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। অভিযোগ দেওয়ার পরে শহীদ খান তাকে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এ জন্য ২০ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাও করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা বেগম আরও জানান, শহীদ খান প্রথমে উচ্চমান সহকারী হিসেবে কাস্টমসে যোগ দেন। ২০০২-০৩ সালে তিনি রাজশাহীর হিলি কাস্টমস স্টেশনে যোগ দেন। সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তখন ২৫ লাখ টাকা দিয়ে নিকুঞ্জতে একটি প্লট কেনেন। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে কোটি টাকার জমি কেনেন। ২০০৪-০৫ সালে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত থাকাকালে মোহাম্মদপুরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালে ঢাকা কাস্টমস হাউস ও আইসিডি কমলাপুরে কর্মরত থাকাকালে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন শহীদ খান। সেই টাকা দিয়ে ২০০৮ সালে বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন তিনি।
রাজস্ব কর্মকর্তা স্ত্রী আরও জানান, ২০১৩-১৪ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে ২০ ভরি স্বর্ণ ও কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন শহীদ খান। তখন মোহাম্মদপুরে ৬৮ লাখ টাকার একটি প্লট কেনেন। ২০১৪ সালে ২০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা বেগম বলেন, আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। বিভিন্ন সময় স্বামীর সন্ত্রাসী বাহিনী মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এখন আমি কী করব বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুল্ক রেয়াত ও প্রর্ত্যপণ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এরপর অভিযোগটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হলে এনবিআর চেয়ারম্যান শহীদ খানকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন। বর্তমানে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এসজে/এমজেএফ