তিনি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রক্রিয়ার বিষয়ে ঢাকা-নেপিদো প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শেষে এএইচ মাহমুদ আলী এ কথা জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বৈঠকে দুই দেশের কূটনীতিকসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে মিয়ানমারের নেপিদোতে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সমঝোতা স্মারকের শর্তগুলো ঠিক করা হয় বলে জানিয়েছে সূত্র।
এদিকে বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফলপ্রসু আলোচনার আশাবাদ ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।
মিয়ানমারে সদ্য শেষ হওয়া আসেম সম্মেলনেও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলন শেষে ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি বলেন, রাতারাতি কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে ঢাকার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার চেষ্টা চলছে।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এখনও প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসছেই।
এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।
তবে এবারও কথা বলার সময় ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি সু চি। মিয়ানমার তাদের বাঙালি বলেই অভিহিত করার চেষ্টা করে। যুগ যুগ ধরেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার। জাতিসংঘও তাদের সবচেয়ে নিপীড়ত জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে।
সু চির হাত ধরে সামরিক শাসন থেকে মিয়ানমার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এলেও রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ১৯৯০ সালের চুক্তি অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সু চি। ওই সময়ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলো লাখো রোহিঙ্গা।
তবে সেই চুক্তিতেও মিয়ানমারের নাগরিকত্বের কথা বলা হয়নি। যুগের পর যুগ মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য রাখাইনে বসবাস করলেও বরাবরই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দেশটির সরকার। ফলে প্রায়ই তাদের ওপর চড়াও হতে পেরেছে সেনাবাহিনী।
সু চি বলেন, আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) বসবাসের অধিকারের ভিত্তিতে ফিরিয়ে নিতে চাই। এটি অনেক আগেই দুই সরকার মেনে নিয়েছি। আমরা এই নিয়মই অনুসরণ করতে চাই।
নতুন করে রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। কিন্তু মিয়ানমারের এক কর্মকর্তা দাবি করেন, বিদেশি ত্রাণ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশই প্রক্রিয়া দীর্ঘ করছে।
অং সান সু চি বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তির কতটা কাছাকাছি রয়েছে তা বলা খুব কঠিন। রাখাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্ভব সবকিছু করছে সরকার। তবে সেজন্য সময় প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭/আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা
কেজেড/এমএ/