ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে ৪ হাজার মে. টন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে ৪ হাজার মে. টন ঝুঁড়ি ভর্তি ইলিশ মাছ। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় এক বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি। চলতি বছর নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। যার বাজার মূল্য ৮শ’ কোটি টাকা।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মহিব উল্লাহ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ধরা পড়া ইলিশের পরিসংখ্যানের তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চত করেন।

জেলেদের সচেতনতা বৃদ্ধি, ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ, কারেন্টজালের ব্যবহার রোধ ও প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তারা।

মেঘনা উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও সদর উপজেলা মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে। এই উপকূলের প্রায় ৬০ হাজার জেলে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় মোট ৩০টি মাছঘাট রয়েছে। এসব ঘাটের আওতায় প্রায় ছয় শতাধিক আড়ত। জেলেরা ইলিশ ধরে ঘাটের আড়তে ওঠান। বহু ডাকের মাধ্যমে সরাসরি জেলেদের কাছ থকে মাছ কেনেন ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের প্রতিদিন কোটি-কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয় এসব ঘাটে। ব্যবসায়ীরা কিনে নদী ও সড়ক পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। এভাবে লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ধরা পড়া ইলিশ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় জেলেরা এবারের ইলিশ মৌসুমে ২০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ শিকার করেছেন। সরকারি হিসাবে গত বছর ছিলো ১৫ হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন। এক বছরের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার ৪শ’ মেট্রিক টন। গড়ে প্রতি কেজি ইলিশ ৪০০ টাকা দরে ২০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনা এ বছর ১শ’ ৭৬ কোটি টাকার বেশি ইলিশ উৎপাদন হয়েছে।

স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়েনি। নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাতের সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। ইলিশ ধরা পড়ায় তারা অতীতের ধারদেনা পরিশোধ করতে পেরেছেন।

জেলার সব চেয়ে বড় মাছ ঘাটগুলোর একটি কমলনগরের মতিরহাট। এ ঘাটের সভাপতি মেহেদি হাসান (লিটন মেম্বার) বলেন, নদীতে ১৫দিন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। একেক দিন এ ঘাটের ৪০টি আড়তে প্রায় দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি হয়েছে।

কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস জানান, বর্ষা ইলিশের ভরা মৌসুম; তবে লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র হওয়ায় সারা বছর ধরে কম-বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। আষাঢ় মাস থেকে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়। প্রচুর বৃষ্টিপাতের সাথে এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসে। এদিকে, মা-ইলিশ রক্ষায় আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে ও পরে ২২দিন নদীতে সকল প্রজাতির মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। জাটকা বড় হওয়ায় মৌসুম মার্চ-এপ্রিল ২ মাস নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এছাড়াও নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা রক্ষা কর্মসূচি। এ সময় জাটকা ইলিশ ধরলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মহিব উল্লাহ বলেন, জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন, জাটকা সংরক্ষণ ও অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি আগামী বছর আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়বে মেঘনায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা,  নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।