ইট-কাঠ আর যান্ত্রিক সভ্যতার এ শহরে এমন সবুজ বিলীয়মান। তবে আশার কথা, রাজধানীকে সবুজায়ন করার নানা উদ্যোগ আজকাল চোখে পড়ে।
মানুষ সাধারণত হাসপাতালে আসেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু হাসপাতালে বিনোদনের জন্য যে পার্ক থাকবে, তা কল্পনার বাইরে। মনোরম দৃশ্য আর রোগীদের সতেজ রাখার লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছে পুষ্পপল্লব। মুল প্রবেশ পথের বামে বাগানটিতে রয়েছে শতাধিক ওষুধি ও বিভিন্ন ফুল গাছের সমাহার। রোগ শয্যার সময়টাতে ক্লান্তি কাটাতে রোগিরাও এখানে প্রশান্তি খোঁজেন।
হাসপাতালের এই জায়গাটুকুতে পুষ্পপল্লব বানানো সহজ ছিল না। পার্কটি চালু হওয়ার আগে অবৈধ দখলকারীদের আয়েত্বে ছিল স্থানটি। একাংশ ছিলো ময়লা-আর্বজনার ভাগাড়, দিনে হকার, সন্ধে হলে মাদক সেবীদের আড্ডা। একটি সরকারি হাসপাতালের সম্পত্তিতে বহিরাগতের এমন দৌরাত্ম ছিলো।
রোগীর জন্য ‘মনোরম পরিবেশ’ নির্মাণে উদ্যোক্তা সরকারি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া। ২০১৫ সালে পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবারমান ও পরিবেশ উন্নয়নে প্রাণবন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নানান প্রতিকূলতা উচ্ছেদ করে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুষ্পপল্লব নির্মাণ করেন তিনি।
পুষ্পপল্লব ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মূল পয়েন্টে রয়েছে আরেকটি ফুলে সুসজ্জিত বাগান। যেখানে রয়েছে গোলাপ, বেলী, রঙ্গন ফুলের গাছ। লাগানো হচ্ছে শীতের নানা জাতের ফুল। হাসপাতালের বন্দিদশা থেকে রোগ মুক্তির প্রশান্তি এই বাগান দুইটি। এখানে তারা প্রাণ খুলে হাঁটতে ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
পুষ্পপল্লব সম্পর্কে উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এমন একটি বাগান নির্মাণের উদ্যোগ নেই। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে একটু দেরি হয়। বাগানের এই জায়গাটিতে ময়লা-আর্বজনার ভাগাড় ছিলো। প্রায় ১৫০ ট্রাক ময়লা ফেলতে হয়েছে। মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ছিলো হাসপাতালের এই জায়গাটি। উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জায়গাটি পরিস্কার করে বাগান বানানো হয়। বাগানটির নাম পুষ্পপল্লব রাখা হয়েছে। পুষ্প অর্থ ফুল আর পল্লব বলতে ১০০ প্রজাতির ওষুধি গাছকে বোঝানো হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকলে বের হওয়ার জন্য রোগীরা হাঁসফাঁস করতে থাকে। হাসপাতালে তাদের জন্য একটু বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। এ চিন্তা থেকে পুষ্পপল্লব। এখানে লেক ও সময় কাটানোর জন্য বসার স্থান রয়েছে। রোগী ও স্বজনদের হাঁটাচলার ছোট ছোট রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এখানে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগীরা শরীর চর্চা ও হাঁটাচলা করতে পারেন। পুষ্পপল্লবে ঘুরে হাসপাতালের একঘেয়োমি কেটে প্রশান্তির পাওয়া যায়।
হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষের ধারণা হচ্ছে, ‘ভালো পরিবেশ, ভালো চিকিৎসা’। সোহরাওয়ার্দীর পরিচালকও মানেন তাই। ফলে গত দুইবছরের প্রচেষ্টায় সরকারি হাসপাতালের চিরায়ত নোংড়া-আর্বজনা থেকে এখন অনেকটাই মুক্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে রোগীর ভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানেরও নানা ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
**সরকারি হাসপাতালের ধারণা বদলাবে ‘পরিচ্ছন্ন সোহরাওয়ার্দী’
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমসি/বিএস