পোশাক কারখানাগুলোতে কমপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠা করাসহ সরকারের ও আন্তর্জাতিক নানা উদ্যোগের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই গার্মেন্টস শিল্প। তবে এখনও বিচার হয়নি দোষীদের।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে পোশাকখাতের বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। সাভারের আশুলিয়ায় নিশ্চিন্তপুরের মনোসন্তোষপুর এলাকার তোবা গ্রুপের কারখানাটিকে পাঁচ বছর আগে সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। রাতের আঁধারে শ্রমিকরা বেরুতে না পেরে পুড়ে মরে ভিতরেই। সরকারি হিসেবেই আগুনে পুড়ে মরা শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৯ জনে। আহত হয়েছিলেন আরো দুই শতাধিক। নিহতদের ডিএনও টেস্ট করে ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এই অগ্নিকাণ্ড নিছক কোনো দুর্ঘটনা ছিল না বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তদন্ত দল। এছাড়া তদন্ত দল অগ্নিকাণ্ডের সময় গেট তালাবন্ধ রাখার প্রমাণও পেয়েছিল।
অগ্নি দুর্ঘটনায় নিহতদের একটি বড় অংশের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও আসা শ্রমিকরা পড়ে মরেছিল সেই দিন।
অভিযোগ ছিল, শ্রমিকদের বের হতে না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল ওই দিন। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির পরিদর্শক একেএম মহসীনুজ্জামান। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে ‘অপরাধজনক নরহত্যা’ এবং ‘অবহেলার কারণে মৃত্যু’র অভিযোগ আনা হয়।
২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ঢাকার জজ আদালতে এ মামলার বিচার শুরু হয়।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের দুই বছর আগে বিচার শুরু হলেও ১৯ দিনে মাত্র চারজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে পেরেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের দাবি তুলেছে শ্রমিক সংগঠনগুলো।
পরের বছর ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা ধসে এক হাজারের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে।
এই বড় দুই দুর্ঘটনায় সরকারি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় আহত-নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। এখন অনেকটাই কাজের সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে পোশাক কারাখানাগুলোতে। সরকারির নজরদারি যেমন বেড়েছে তেমনি সচেতন হয়েছৈ মালিক-শ্রকিরাও।
পাঁচ বছর আগে সংঘটিত তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে ২৪ নভেম্বর জুরাইন কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানাবে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এদিন সমাবেশ ও মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম।
সকাল ৯টায় জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আসাদগেটে সকাল ৭টায়, শাহবাগ মোড়ে বারডেম হাসপাতালের সামনে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং পরে জিপিও’র সামনে দিয়ে মিছিলটি জুরাইনে গিয়ে পৌঁছাবে। সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়ে মিছিলটি বেলা পৌনে ১১টায় প্রেসক্লাবের সামনে যাবে। এপর সেখানে সমাবেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
এমআইএইচ/জেএম