ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীতের বাহারি পিঠার স্বাদ নিতে দোকানে দোকানে শহুরে মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
শীতের বাহারি পিঠার স্বাদ নিতে দোকানে দোকানে শহুরে মানুষ বগুড়ায় রাস্তার পাশের দোকানে দোকানে শীতের পিঠার স্বাদ নিতে পিঠাপ্রেমী মানুষের ভিড়; ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: শীতের আমেজ সবখানেই। গ্রামই বলুন আর শহরই বলুন। দিন যাচ্ছে আর শীতের মাত্রা বাড়ছে। ভোরের প্রকৃতি থাকছে কুয়াশায় মোড়ানো। বিকেল থেকেই বইতে শুরু করছে শীতের হিমেল হাওয়া। শীতের ধকল সামনে নিতে যে যার মত করে প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

ঋতুবৈচিত্রের ধারায় এখন অগ্রহায়ণ মাস। গ্রামে গ্রামে চলছে নতুন ধান কাটার ধুম।

কৃষাণ-কৃষাণী ব্যস্ত মাঠে বাড়ির উঠোনে। ঘরে ঘরে চলছে নবান্ন উৎসব। আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের এই উৎসব ধরে রাখতে পাড়ায় মহল্লায় শহরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলছে নানা আয়োজন, নানা অনুষ্ঠান।

নতুন ধানের নতুন চালের নানা স্বাদের বাহারি পিঠাপুলি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ। প্রত্যেক শীতে গ্রামের বাড়িতে তো বটেই  শহরের বাসাবাড়িতেও চলে পিঠাপুলির আয়োজন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

এরই মধ্যেই শহর এলাকায় রাস্তার পাশের দোকানিরা বাহারি পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে জেঁকে বসতে শুরু করেছেন।   তৈরি করছেন ভাঁপা, চিতই, কুশলি, ঝাল, সবজি মেশানো ঝাল পিঠা। তবে শীতের এসব গ্রামীণ পিঠা পাওয়া ও খাওয়া নিয়ে শহুরে মানুষের মধ্যে একটা হাহাকার ভাব থাকে।

কিন্তু এই দোকানিরা শহুরে মানুষের শীতের গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাহারি এসব পিঠার স্বাদ আস্বাদনে অনেকটা সহায়ক ভূমিতা পালন করে থাকেন। চাইলেই যে কোনো মানুষ শীতের এসব পিঠার স্বাদ নিতে পারেন।   বাসার পাশে, শহরের পথে পথে বা মোড়ে মোড়ে এসব পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে আপনার অপেক্ষায় শীতজুড়ে বসে থাকবে এই  দোকানিরা।

বগুড়ায় রাস্তার পাশের দোকানে দোকানে শীতের পিঠার স্বাদ নিতে পিঠাপ্রেমী মানুষের ভিড়; ছবি: আরিফ জাহানবেগুনী বেগম। স্বামী ইদ্রিস আলী। বগুড়া শহরের রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বসবাস করেন। শহরের শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম সড়কের খান্দার এলাকায় সেই শীতের বাহারি পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেছেন এই দম্পতি।

এক লাইনে চুলো বসিয়েছেন পাঁচটা। একটা তৈরি হচ্ছে ভাঁপা পিঠা। অন্যগুলোতে চিতই, ডিম চিতই, ঝাল-মিষ্টি কুশলি ও ঝাল পিঠা তৈরির কাজ চলে। কড়াই, পাতিল, চালের গুড়ো, গুড়, নারিকেল, ডিম, শুটকি ভর্তা, তেলসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী। প্রত্যেহ বিকেল থেকে রাত প্রায় ১১ টা পর্যন্ত এই দম্পতি এসব পিঠা তৈরি আর বিক্রি করেন।

গ্রামীণ এসব পিঠার স্বাদ আস্বাদনে শহুরে মানুষের ভিড় বিকেল থেকেই শুরু হয়ে যায়  এসব দোকানে। ক্রেতা সাধারণ দোকানের তিন পাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকেন। চাহিদামত পিঠা বানিয়ে ক্রেতার হাতে তুলে দেন তারা। এই দম্পতির ব্যবসার কাজে সহায়তা করেন আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ।

বেগুনী বেগম ও ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে জানান, ভাঁপা পিঠা ১০ টাকা, চিতই ১০ টাকা, ডিম চিতই ২৫ টাকা, ঝাল ও মিষ্টি কুশলি ৮ টাকায় বিক্রি করেন তারা। প্রত্যেক শীত মৌসুমেই এ ব্যবসা করেন তারা। এ থেকে বেশ ভালই আয় হয়। যা দিয়ে তাদের সংসার ভালভাবেই চলে।

শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা ও আশেপাশের এলাকায় দেখা গেল শীতের বাহারি পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেছেন এরকম একাধিক দোকানি।

আব্দুল বারিক, আমির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা ভাঁজিপুরির ব্যবসা করি। তবে প্রত্যেক শীতে শীতের পিঠাপুলিকে বেশি গুরুত্ব দেই। কারণ এ সময়টাই ক্রেতা সাধারণ বাহারি পিঠাপুলি বেশি খান’।

জাহাঙ্গীর আলম, সাধন রায়, আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আগের মত বাসাবাড়িতে এসব পিঠার আয়োজন করা হয় না। এছাড়া পেশাগত কারণে অনেক সময় বাসার বাইরে থাকতে হয়। তাই বাসায় ঠুকঠাক পিঠা তৈরি করা হলেও তা খাওয়া হয় না। ফলে রাস্তার পাশের দোকানেই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে হয়।

সাবিনা ইয়াসমিন, রুমানা ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘পেশায় আমরা চাকরিজীবী। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে নির্দিষ্ট কাজের বাইরে সময় করে ওঠা যায় না। এতে নতুন কিছু তৈরি করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে।   এতে অনেক সময় একা আবার কখনও পরিবার মিলে রাস্তার পাশের দোকানে গিয়ে পিঠাপুলি কিনে খাওয়া হয়।   আবার সেগুলো কিনে বাসায়ও নিয়ে যাওয়া হয়’।
বাংলাদেশ সময়:০৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।