অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনটি সংগঠনের মধ্যে ‘ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন’- এর দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কোনো বৈধ নেতৃত্ব নেই এবং ‘ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা মিশুক চালক-শ্রমিক ইউনিয়ন’ নিবন্ধিতই নয়!
আর এ দুই সংগঠনের নেতৃত্বের দাবিদার দু’জন রয়েছেন আন্দোলনের ডাক দেওয়া ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে। ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের আজিজুল হক মুক্ত আহ্বায়ক ও ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা মিশুক চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের সাখাওয়াত হোসেন দুলাল রয়েছেন সদস্য সচিব হিসেবে।
ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমানে কোনো কার্যকরী কমিটি নেই উল্লেখ করে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ নেতাদেরকে আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিভাগীয় শ্রম দফতর।
গত জানুয়ারি মাসে দফতরের উপ শ্রম-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘সংগঠনটির সর্বশেষ কার্যকরী কমিটি নির্বাচিত হয় ২০০০ সালে। এরপর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকে গঠনতন্ত্রের বিধান অনুসারে নির্বাচন করার তাগিদ দেওয়া হলেও সংগঠনের বিবদমান দু’টি পক্ষ আলাদাভাবে কাগুজে নির্বাচন দেখিয়ে ফলাফল দাখিল করেন, যার কোনোটিই গ্রহণযোগ্য হয়নি’।
গত বছরের মে মাসে সাখাওয়াত হোসেন দুলালকে ‘জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিচালনা প্রসঙ্গে’ শীর্ষক চিঠিতে ঢাকা বিভাগীয় শ্রম দফতর কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠায়। উপ-পরিচালক সালাহউদ্দীন মাহমুদ স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে ঢাকা মহানগর মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধন নম্বর (ঢাকা-২৯৭৮) ব্যবহার করে ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা মিশুক চালক-শ্রমিক ইউনিয়ন নামে সংগঠন পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়।
এ নামে যুগ্ম শ্রম পরিচালকের দফতর থেকে কোনো রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, ‘রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো ট্রেড ইউনিয়নের কাজ চালানো হলে ছয়মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন’।
অনিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনার কারণে দুলালের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
শাখাওয়াত হোসেন দুলাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে মিশুক ছিল, এখন ওই মিশুকের চালকরাই সিএনজি অটোরিকশা চালাচ্ছেন। তাই নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করা হয়েছে। সরকারি কাজতো, একটু সময় লাগে। তাই এখনো কাগজপত্র হাতে পাইনি’।
নতুন সিএনজি অটোরিকশা নামানোসহ প্রায় একই দাবিতে গত আগস্ট মাসে আরেকটি পক্ষ আন্দোলন করেছিল- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের আন্দোলনে মালিকপক্ষের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে, কিন্তু শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। আগে যারা আন্দোলন করেছেন, তাদেরকে শ্রমিক নেতা হিসেবে আমি মনে করি না’।
গত আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ খোকন বলেন, ‘তাদের এ আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিভিন্নভাবে তিন দফা চিঠি চালাচালির পর সর্বশেষ ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে গত ২২ আগস্ট থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। কিন্তু বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান গত ২০ আগস্ট আমাদের নিয়ে বসে দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন’।
‘কিছু দাবি যখন সরকার পূরণ করতে শুরু করেছে, তখন একটি মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলে এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন’- অভিযোগ খোকনের।
তিনি বলেন, ‘উবারের নীতিমালা পাসের অপেক্ষায়। আমরা গত ১৫ বছরে যে সেবা দিতে পারিনি, উবার-পাঠাও সে সেবা দিতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল দেশে সবাই ডিজিটাল সেবা পাবেন। কিন্তু এটাকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াত জোটের মদদপুষ্ট হয়ে একটি গ্রুপ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন’।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
পিএম/এএসআর