সন্তানদের পড়ালেখার খরচ, ঘরে থাকা কিষানির আহ্লাদ পূরণে নতুন শাড়ি! ওষুধপথ্য, কিষান পরিবারগুলোর সবই যেন এই শিম ক্ষেতকে কেন্দ্র।
সেই কৃষকদের একজন গোলাপগঞ্জের লক্ষণাবন্দ এলাকার আব্দুল কাদির।
তবে শিম ক্ষেত করেই যে শুধু বসে থাকেন, তা নয়। বছরে সব ফসল ফলানোতেই পারদর্শী কাদির বলেন, বৃষ্টি না হলে শিমে লাভবান হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। কেননা, বৃষ্টির পানিতে শিমের ফুল ঝরে পড়ে। দুই কেদার (৬০ শতক) জমিতে শিম ফলাতে খরচ পড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
শিম চাষে লাভবান হওয়ার কথা জানিয়ে একই এলাকার সুমন আহমদ বলেন, এবার এক কেদার (৩০ শতক) জমিতে শিম ক্ষেত করেছেন তিনি। তার মতো সহস্রাধিক মানুষ এখন শিম চাষি। সপ্তাহ দুই পর শিম বাজারজাত করতে পারবেন-আশাবাদী তিনি।
সরেজমিন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফসলের মাঠে দেখা মেলে চোখ জুড়ানো শিমের ক্ষেতের। শিম গাছের সবুজ সামিয়ানা প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি গ্রামে। এবারও উপজেলার রাখালগঞ্জ, লক্ষণাবন্দ, ঝাপাএলাহীগঞ্জ, দঁড়া, নিমাধল, দারাবহর এলাকার মাঠ-ঘাট পরিপূর্ণ শিম ক্ষেতে।
শুধু ফসলের জমিতেই নয়, সড়কের পাশে ও বাড়ির আঙ্গিনা জুড়ে রয়েছে শিমের মাচা। তাতে ধরেছে থোকায় থোকায় শিম। এখন শিম পরিপক্ক করে বিক্রি উপযোগী করে তুলতে ক্লান্তিহীন সময় পার করছেন কৃষকরা।
স্থানীয় বারি ১ ও ২, আশ্বিনা, ইপসা, গোয়াল গাদ্দা, হাতির কানি, ফরাসসহ স্থানীয় আরও কিছু জাতের শিম আবাদ করা হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
সিলেটের সব উপজেলায় কম-বেশি শিম চাষ করা হলেও বেশি প্রসিদ্ধ গোলাপগঞ্জ। এছাড়াও হবিগঞ্জের বাহুবলও শিম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। পাশাপাশি মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জেও শিমের ফলন হয়-এমনটি জানিয়েছে সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
গত বারের ন্যায় এবারো সিলেট বিভাগে রবি মৌসুমে ৭ হাজার ২৯৭ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক শিমের চাষ হয়েছে সিলেটে ৩ হাজার ৩২৭ হেক্টরে। আর সর্বনিম্ন মৌলভীবাজারে ৭৮০ হেক্টর। এছাড়া হবিগঞ্জ ১ হাজার ১৪০ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৫০ হেক্টরে শিমের চাষ হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ পরিচালক ড. মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সিলেট রবি শস্যের মধ্যে কান্ট্রিবিন শিম ও ফরাস শিমের চাষ ভাল হয়। বিশেষ করে গোলাপগঞ্জের শিমের সুখ্যাতি রয়েছে সিলেটে। তবে হবিগঞ্জের শিম মূলত ঢাকার বাজারে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
এনইউ/আরআই