বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় এমন মন্তব্য করেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া। হাসপাতালটির বদলে দেওয়ার নায়ক বলা হয় তাকে।
‘আমাদের সম্মিলিত চেষ্টায় অনাস্থা থেকে আস্থায় ফিরেছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ভিআইপিরাও এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন। ’
কেন তাকে বদলে যাওয়ার নায়ক বলা হয় কারও কাছ থেকে জেনে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হাসপাতালটির মূল ফটকে পা রাখতেই সেই সংশয় কেটে গেলো। প্রধান সড়ক থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে অবস্থিত হাসপাতালটির ভবনগুলো। সামনে বিশাল ফাঁকা মাঠে এক সময় ছিল ময়লার ভাগাড়। সন্ধ্যার পরে চলতো অসামাজিক কার্যক্রম। নাক চেপে হাসপাতালে যেতে হতো। এখন সেখানে ফুলের সুবাস। ভাগাড় পরিণত হয়েছে ফুলের বাগানে।
কিছুদিন আগেও হাসপাতালটিতে ছিল দালালের ছড়াছড়ি। আগন্তুক এলেই ঘিরে ধরতো দালালরা। বেড পাইয়ে দেওয়াসহ নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করতো রোগীদের। কিন্তু বুধবার (২২ নভেম্বর) দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলেও তার লেশমাত্র পাওয়া গেলো না।
হকারের উৎপাতও ছিল উল্লেখ করার মতো। কিন্তু সেসব ঘটনা এখন সুদূর অতীত। সবটাই পুরোপুরি ছিমছাম গোছানো। আর পরিচ্ছন্নতাও উল্লেখ করার মতো। কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করলে কম বলা হবে না। সর্বত্রই যেনো পরিবর্তনের ছোঁয়া। নাক থেকে উবে গেছে হাসাপাতালের ভ্যাঁপসা গন্ধও।
পরিচালকের কাছে প্রশ্ন ছিল শুধু কি বাণিজ্যিক সাজ-সজ্জা! মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, তাহলে চলবে কেন। আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বাংলাদেশ কেন, ভারতের উন্নত হাসপাতালের তুলনায় কোনো অংশে কম নয় এটা।
ডা. উত্তম কুমার বলেন, ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য ভারতের কয়েকজন চিকিৎসক এসেছিলেন। আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থাপনা দেখে বিস্মিত তারা। মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশের সরকারি কোনো হাসপাতাল এতো চমৎকার হতে পারে আমাদের ধারণাই ছিল না। ভারতের অনেক হাসপাতালও এতো চমৎকার নয়।
তিনি বলেন, কিছু বিশেষ সেবা রয়েছে যেগুলো বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। ‘ভয়েজ ল্যাব’ সংযোজন করা হয়েছে এখানে। যাদের জন্ম থেকে কিংবা অপেরশনের কারণে স্বর উৎপন্ন হয় না, তাদের ভয়েজ ল্যাবের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই সেবা বাংলাদেশে আর কোথাও ছিল না। সম্প্রতি বিএসএমএমইউতে স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তিতে অপরেশন ছাড়া চোখের চিকিৎসা করানো হচ্ছে। অন্য জায়গায় যার খরচ পড়ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। আমরা সেই ল্যাসিক করাচ্ছি পুরোপুরি ফ্রি। গত এক বছরে ৩ শতাধিক রোগী এই সেবা নিয়েছেন বলে জানান এই পরিচালক।
তিনি বলেন, পায়ুপথের কিছু অপরেশন আছে। একটির নাম হচ্ছে লংগু অপরেশন। আমরা যুক্ত করেছি আধুনিক স্ট্যাপলিং করার যন্ত্র। বাইরে ত্রিশ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। কিন্তু আমরা গরিব রোগিদের এটা ফ্রি করাচ্ছি। ১০ শয্যার আইসিইউ চালু করা হয়েছে। একজন রোগী ভেন্টিলেশনে থাকলে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। কিন্তু আমরা সেই সেবাও দিচ্ছি ফ্রি। ৪ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিটও চালু করা হয়েছে।
‘নতুন করে আধুনিক ক্যানসার ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। পুরো ইউনিট হবে সেন্ট্রাল এসি। আপাতত ৬ শয্যার ডে-কেয়ার সেন্টার থাকবে। ৫৪ বেডের এসি পেইং বেড থাকবে। পর্যায়ক্রমে সব আধুনিক সেবা সংযোজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ’
আমরা মানবিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেকটাই সফল হয়েছি। রোগীর জন্য আমার রুমে সব সময় গ্রিন সিগন্যাল। পিএ-কে বলা আছে আমার সঙ্গে কথা বলতে এসে কোনো রোগী যেনো ফিরে না যায়। গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষগুলো যেনো কোনোভাবেই হতাশ না হয়।
প্রধানমন্ত্রী হাসাপাতালটিকে তার পাড়ার হাসপাতাল বলে অভিহিত করেন। নেক নজরে রয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও। যে কারণে ৮৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি ১৬শ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ চলমান। বাড়বে সেবার পরিধিও। জানান ডা. উত্তম কুমার।
নানা কারণে অনেকটাই পিছিয়ে পড়া এ হাসপাতালটি পুরোপুরি বদলে গেছে বলা যায়। ২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেস্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে। এবারও রয়েছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। অনেক হাসপাতাল সান্ধ্যাকালীন রাউন্ডআপ ইন্টার্ন ডাক্তারদের দিয়ে সারছে। কিন্তু এখানে সান্ধ্যাকালীন রাউন্ডআপের জন্য রয়েছে আলাদা হাজিরা। পরিচালক থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার- সবাই নিয়মিত হাজিরা দেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
এসআই/এএ